সব গ্রন্থই পবিত্র
সাহিত্য২: সাহিত্য৩: সাহিত্য৪: সাহিত্য৬: সাহিত্য৮: সাহিত্য৯: সাহিত্য১৩: সাহিত্য১৪: সাহিত্য২২: তিন প্রকার ছন্দ সাহিত্য২৩: ক্যাফের কবিতা সাহিত্য২৪: সাহিত্য২৫: আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব |
সাহিত্য/কবিতা
নিউইয়র্কে হয়ে গেলো তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মুহাম্মদউল্লাহ বাংলা কবিতার ঐতিহ্য ও শব্দগুচ্ছ’র মাধ্যমে অনুবাদ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। জ্যোতির্ময় দত্ত শব্দগুচ্ছ ও এর সম্পাদক হাসানআল আব্দুল্লাহর অগ্রযাত্রাকে স্বাগত জানান। এবং এই প্রকাশনা অব্যহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অনুষ্ঠানে সহোযোগিতা করার আশ্বাস দেয়া হয় পোয়েস্ট হাউজের পক্ষ থেকে। ২৪শে আগষ্ট, শনিবার, ২য় দিনের আয়োজন আরো জাকজমকের সাথে অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার মেরিক বুলোভার্ডে অবস্হিত কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে। এদিন ছিলো রকমারি পরিবেশনা। অনুষ্ঠান চলে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত। কবিকণ্ঠে কবিতা, আবৃত্তি, শিশুদের চিত্রাঙ্গণ প্রতিযোগিতা, বাংলা কিবতা ও তার অনুবাদের উপর বিশেষ সেমিনার, নৃত্য পরিবেশনা, সঙ্গীত ও বিশেষ পুরস্কার প্রদাণের ভেতর দিয়ে সাজানো ছিলো পুরো দিন। “শব্দগুচ্ছ”র নানা দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মুহাম্মদউল্লাহ, “শব্দগুচ্ছ” কবিতা পত্রিকার সম্পাদক কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ এবং কবি ও প্রকাশক স্ট্যানলি এইচ বারকান। কুইন্স লাইব্রেরীর পক্ষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মিসেস ডরিস জোনস ও মিস সেলিনা শারমিন। উদ্বোধনী সঙ্গীতের পরপরই মূল মঞ্চে উপস্থিত কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক শিল্পীদের এক সঙ্গে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের ভেতর দিয়ে শুরু হয় এ দিনের অনুষ্ঠানমালা। বেলা ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। অংশ গ্রহণ করে সমনিতা মুখার্জি, পিয়ান মুখার্জি, অনিন্দিতা ভট্রাচার্য, উর্মী দেবী, উত্তম নাগ, বিজয়া নাগ, প্রতীক বিশ্বাস, জারাফ রহমান, সামান্তা প্রমুখ। বিচারক হিসেবে ছিলেন “শব্দগুচ্ছ” কবিতা পত্রিকার সহকারী সম্পাদক কবি নাজনীন সীমন, মনিরা নূর, ও ক্রিস্টিন ডোল। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী দম্পতি শহীদুল সরকার ও সাকিনা ডেনী এবং মূল ধারার শিল্পী লী হ্যারিসন। যন্ত্রসংগীতের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন নন্দিতা দাস। কবিতা পাঠ করেন মারিয়া বেনেথ, আনিস আহমেদ, সুলতান ক্যাটো, ইভেত নেসার মোরেনো প্রমুখ। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে ছিলো সেমিনার। বাংলাদেশের অতীত এবং সমসময়িক কবিদের কবিতা ও এর ইংরেজী অনুবাদ নিয়ে বিশেষ সেমিনারে অংশ নেন সৈয়দ মুহাম্মদউল্লাহ, হাসানআল আব্দুল্লাহ, স্ট্যানলি এইচ বারকান, প্রফেসর নিকোলাস বার্ন্স ও আনিস আহমেদ। উপস্হিত দর্শকদের প্রশ্নেরও উত্তর দেন সেমিনারে অংশগ্রহনকারী বক্তারা। কবিতা ও বিজ্ঞান প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন ড. মিজান রহমান। তিন দিনের এই কবিতা উৎসব উৎসর্গ করা হয় বাংলা ভাষার চার প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদকে; এঁদের কবিতা আবৃত্তি করেন ফারুক ফয়সল এবং গোপন সাহা। এর পরপরই নিউইয়র্ক শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা বাংলাদেশের গান বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় পরিবেশন করেন। জীবন চৌধুরীর পরিকল্পনায় ও ইংরেজী অনুবাদে গান পরিবেশন করেন মনিকা রায়, চন্দ্রা রায়, বাবলী হক ও নাসরীন চৌধুরী। অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্বে ছিলো আবারোও কবিতা পাঠের আয়োজন। এই পর্বে বাংলায় কবিতা পাঠ করেন আনিসুর রহমান অপু। মূল ভাষা ও ইংরেজী অনুবাদে কবিতা পড়েন নাজনীন সিমন, মোহাম্মাদ আতাউর রহমান, বিল ওয়ালেক, আর্থার ডবরিন, ধনঞ্জয় সাহা, ক্রিস্টিন ডোল ও স্ট্যানলি এইচ বারকান। অন্যদিকে মিকেলা মোসোলিনোর সিসিলিয়ান ভাষার গান ও মৌগন্ধা মুখার্জির রবীন্দ্র সঙ্গীত অনুষ্ঠানে যোগ করে বাড়তি স্বাদ। সব শেষে ছিলো পুরস্কার বিতরণী ও “শব্দগুচ্ছ” কবিতা পত্রিকার ১৫ বছর পূর্তির আয়োজক কমিটির পরিচিতি। শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে ১ম স্হান লাভ করে বিজয়া বিশ্বাস, ২য় স্হান লাভ করে পিয়ান মুখার্জি, অনিন্দিতা ভট্রাচার্য ও সামান্থা রহমান দুইজন যুগ্মভাবে ৩য় স্হান লাভ করে। তাছাড়া শব্দগুচ্ছ আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান কবি স্ট্যানলি এইচ বারকান। কবির হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন উপস্থিত বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার কবি শিল্পী ও সাংবাদিক বৃন্দ। দ্বিতীয় দিনের এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে পুরোবেলাই ছিল দর্শক শ্রোতাদের আনাগোনা। সবাইকে দুপুরের খাবার পরিবেশনের দ্বায়িত্বে ছিলেন ভূঁইয়া আহসান হাবীব। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে এই আয়োজনে ইতিপূর্বে প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মুহাম্মদউল্লাহকে সভাপতি করে ১৫ সদস্যের উৎসব কমিটি গঠন করা হয়। কবিতা উৎসবের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন “শব্দগুচ্ছ” কবিতা পত্রিকার সম্পাদক কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ, উপদেষ্টা স্ট্যানলি এইচ বারকান, জ্যোতির্ময় দত্ত, মীনাক্ষী দত্ত, ফারুক আজম, কৌশীক আহমেদ, মোহাম্মাদ আতাউর রহমান, বিভিন্ন উপকমিটির দায়িত্বে ছিলেন নাজনীন সীমন, আনিসুর রহমান অপু, ফারুক ফয়সাল, ভূঁইয়া আহসান হাবিব ও তৈয়বুর রহমান টনি প্রমুখ। বার্বাকিউ পার্টি, কবিতা পাঠ, ও কবিদের অন্তরঙ্গ আলাপচারিতার ভেতর দিয়ে সাজানো হয় উৎসবের তৃতীয় বা সমাপনীদিন লং আইল্যান্ডের ম্যারিকে অবস্থিত পাবলিশিং হাউস ক্রসকারচালর কমিউনিকেশনস-এর অফিসে। রৌদ্রময় শান্ত দিনে অপূর্ব বাতাসে খোলা আকাশের নিচে পার্শ্ববর্তি গাছে যখন শোভা পাচ্ছিলো কবিতা উৎসবের ব্যানার কবিরা তখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন কবিতা, অনুবাদ, কবিতার প্রকাশ, শিল্পকলা ইত্যাদি নিয়ে নান্দনিক আলোচনায়। ৫৩টি ভাষায় সাড়ে চারশ’র উপরে দ্বিভাষিক কবিতার বই-এর প্রকাশনা অফিস এদিন উন্মুক্ত ছিলো নানা দেশের কবিদের জন্যে। ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্সিনিয়া, ম্যাসাচুসেস্ট, শিকাগো, নর্থ ক্যারোলিনা, নিউর্জাসি, পেনসিলভেনীয়া এমনকি কানাডা থেকে বিভিন্ন ভাষার কবিরা অন্যান্য দিনের মতো এদিনও জড়ো হয়েছিলেন শব্দগুচ্ছ’র পতাকা তলে। সম্মিলিত কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছিলেন কবিতার বিশ্বায়নের পক্ষে। স্ট্যানলি এইচ বারকান ও বিবি বারকানের তত্ত্ববধানে নানারকম মুখোরচক খাবার ছিলো বাড়তি পাওনা। এডাল গোর্গির কবিতার সাথে পেইন্টিং যুগিয়েছিলো নতুন উদ্যম। দুপুর একটা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে কবিতা পাঠ ও আলোচনায় অংশ নেন আনিস আহমেদ, লুইসা কালিও, সুলতান ক্যাটো, মেরি গোর্গি, চালর্স ফিসম্যান, লী হ্যারিসন, রবিন মেটস, লিস মেটস, মিকেলা মোসোলিনো, মিন্ডি রিকউইজ, ধনঞ্জয় সাহা, নাজনীন সীমন, একক সৌবীর, ফ্রান সিসকো, মারসা সোলোমন, বিল ওয়ালেক প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্যে হাসানআল আব্দুল্লাহ বলেন, “কবিতার বিশ্বয়নে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আসুন শব্দগুচ্ছ’র পাতাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলি। আরো বেগবান করে তুলি আমাদের কলম।” স্ট্যানলি এইচ বারকান কবিতা দিয়ে বিশ্বজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনদিনের এই উৎসবকে সফল করে তোলার জন্য শব্দগুচ্ছকে অভিনন্দন জানান। উৎসবের আয়োজন কল্পে প্রকাশিত হয় বিশেষ স্যুভিনির ও শব্দগুচ্ছ’র নতুন সংখ্যা। ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডের উপর প্রবন্ধ লেখেন জ্যোতির্ময় দত্ত, স্যানলি এইচ বারকান, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, নাজনীন সীমন, ক্যারোলিন গিল ও হাসান সাব্বির। শুভেচ্ছাবার্তা পাঠন নানা ভাষার কবিরা। তাছাড়া বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয় নিউইয়র্কের সাপ্তাহিত বাঙালী পত্রিকায়। ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেন অনলাইন একটিভিস্ট জাহেদ আহমেদ। শব্দগুচ্ছ’র পক্ষে কুইন্স লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ, পোয়েটস হাউস, ক্রস-কালচারাল কমিউনিকেসন্স, সাপ্তাহিক বাঙালী, এটিএনবাংলা টিভি, ডট-নেট, আন্তর্জাতি কবিতা উৎসব কমিটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ভবিষ্যতেও এ ধরনের আয়োজনের সহযোগিতা পাওয়া আশাবাদ ব্যক্ত করেন কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ। |