সব গ্রন্থই পবিত্র
|
সাহিত্য/কবিতা কাজী ফয়সল আহমেদ (1952- 2010)
একটি দুপুর যদি দিতে পারো একটি দুপুর যদি দিতে পারো, অলস দুপুর, কিছু সবুজ কবিতা দেবো রৌদ্রের মোড়কে নিজের ভাষায় দেবো নিসর্গের প্রাঞ্জল অনুবাদ যথার্থ ভাবার্থ দেবো করুণ নীরবতার। বুক শেলফ্ ভরে আছে বাচাল ইতিহাসে ইতিহাসের আগুনে সব করে দেবো ছাই দরোজার ওপাশে কেনো প্রবেশ নিষেধ প্রমাণসহ ব্যাখ্যা দেবো তার একটু আলো আজ জ্বেলে দেবো নিষিদ্ধ আঁধারে যেখানে শিঙা হাতে ইস্রাফিল মহড়ায় রত। বড়ো বেশি তাড়াহুড়ো এই জনপদে ছেড়া পালকের মতো বাতাসেই ভাসি দিন যায় অস্থির, আধোজাগা মোহাবিষ্ট রাত জীবন খুঁটিয়ে দেখার এক দণ্ড নেই অবসর একটি দুপুর যদি দিতে পারো, অলস দুপুর, কিছু দুরন্ত কবিতা দেবো প্রথম প্রেমের সময় ও শূন্যতা জুড়ে উদাস বাতাস নীলে নীলে ভরে দেবো কবিতার আকাশ সূর্যের আগুনে পুড়ে জ্বলন্ত অবসরে গড়ে দেবো আমি তার ছন্দের নূপুর একটি দুপুর যদি দিতে পারো, অলস দুপুর। কোনো এক সীমান্তে দাঁড়িয়ে যদি খুলে পড়ে যায় এই অবশিষ্ট অন্তর্বাস জন্মদিনের রক্তমাখা শরীরে আবার অন্ধীভূত বৃক্ষেই ফিরে যেতে হয় ফিরে কি পাবো সেই প্রাচীন বৃক্ষতল অক্ষত আমার প্রথম নিবাস যদি খসে পড়ে যায় এই অবশিষ্ট অন্তর্বাস। কত পথ হেঁটেছিলাম দিক ভ্রান্ত, দিগম্বর, সহসা লজ্জিত হাতে একটি শুকনো পাতা কুড়িয়ে নেবার আগে! কতকাল কেটেছিল গাছের পাতায় লজ্জা ঢেকে। এক টুকরো কাপড়ের এই সভ্যতায় পৌঁছানোর আগে পাথরের আঘাতে কত পাথরের পাহাড় গুড়িয়েছি নিরলস এই বালিয়াড়ি ঘাটে আগুনের প্রথম স্ফুলিঙ্গ উঠে অন্ধকার বিদীর্ণ হাবার আগে। ওসব কিছুই মনে আর পড়ে না এখন বন মোরগের কাঁচা কলজের ঢেকুর ওঠেনা উদর থেকে তাবৎ জন্তু আর জানোয়ারের চামড়াই আজ মূল্যবান পোশক আমার। আমাকে কুর্ণিশ করে কিছু আণবিক সেবাদাস দিন আর রাতের প্রতিটি প্রহর। বোধোদয়ের স্তরে স্তরে নিযুত বছরের সাধনার শেষে সভ্যতার প্রকাণ্ড এক হেলমেট মাথায়, আলোর গতিতেই যেনো অন্ধকারের পথ ধরে ধাবমান। স্রষ্টার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছি আজ, নিমেষে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারি তোমাদের এই খেলনা পৃথিবী। মধ্যরাতে দৈবাৎ ঘুম ভেঙে গেলে তাই একটি নিষিদ্ধ বাতাসের চিৎকার শুনি: সময়ের বাঁধভাঙা ঢেউ এসে ভাঙবে পাহাড়, সবুজ আকাশগুলো উড়িয়ে নেবে ঝড় অন্ধকূপ টেনে নেবে সব ছায়াপথ। অতিরিক্ত দেরী হবার আগে অন্ধকারের মুখোমুখি দাঁড়াবার হয়তো এখুনি সময় আমার, এখনো এক চিলতে এই অন্তর্বাস নির্ঘুম করেছে ধারণ আলো আর অন্ধকারের এক নিশ্চিত ব্যবধান। পঞ্চভূতের কিল অট্টালিকার অরণ্য এই ম্যানহাটানের বুকে ড্রাগের নেশায় সোনার হরিণ মরছে ধুঁকে ধুঁকে। লটোপতি ভীষণ চালাক খেঁকশিয়ালের ধাড়ি ছ’টি নাম্বার কেটে দেখি তিনটি দিলো আড়ি। আকাশ কুসুম দিবা-স্বপ্ন পঞ্চভূতের কিল তুলোধুনো করলো আমার তুলোর মতো দিল। দৃষ্টিকানা ইষ্টিদানব সৃষ্টিকানা করে কাগজ কাটা ফুলের তোড়া নাকের ডগায় ধরে। ফুলগুলো যে দেখতে ছিলো গন্ধরাজের রাজা গন্ধছাড়া সব অবিকল রঙ-রূপে তরতাজা। লজ্জারাঙা বাসার ঘরে মশারীর জাল ছেঁড়া বিনিসুতোর মালা এখন কাঁটাতারের বেড়া। |