NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com


সব গ্রন্থই পবিত্র
অতএব জিকির থামিয়ে বলো
এতোকাল ক'খানা পড়েছো।

সব ঘরই পবিত্র
অতএব তাণ্ডব থামিয়ে বলো
তুমি তার ক'খানা গড়েছো।



সাহিত্য/কবিতা

হাসানআল আব্দুল্লাহ


ক্যাফের কবিতা

চতুর্থ অধ্যায় (ইহুদী মীথ)

১
গলির পরে
তর্ক করে
এক বা অধিক সর্বহারা।
“সর্বধারা
বিচার শেষে
মধ্যি পথে এখন ভেসে
এসে দেখি আইন কানুন
যতোই জানুন
হচ্ছে না কাজ।”
বাতাসগুলো কানের কাছে দিচ্ছে আওয়াজ।
ধুলোগুলো
ধরছে মুলো
কানের কাছে
এটম বোমা ঝুলে আছে গাছে গাছে।



২
মেঘ এখানে শরীর ছাড়ে
ধীরে ধীরে অন্ধকারে।
আমরা যারা কলুর বলদ—
এবং যাদের গোড়ায় গলদ,
হঠাৎ তাদের মাথায় পড়ে নাস্তা নাবুদ
করতে ছাড়ে না: যদিও কেউ মাবুদ মাবুদ
শব্দ তুলে দৌড়ে পালায়;
যদিও কেউ হালকা ছাতায়, কথার মালায়
আটকাতে চায় বৃষ্টি-ফোঁটা;
যদিও কেউ সরু মোটা
ছাদের নিচে এসে দাঁড়ায়,
তবুও মেঘ দু’হাত বাড়ায়
কিম্বা শকুন শুয়োর হয়ে লম্বা গলা
—আর যে কথা যায় না বলা—
ক্ষতি অনেক করে সাধন;
কোনো কিছুর হালকা বাঁধন
এখানে মেঘ এখন মানে না।
ঘুরতে ঘুরতে নাচতে নাচতে
জোরে কিম্বা আস্তে আস্তে
এখানে মেঘ
খুলে সকল বুকের আবেগ
দখল করে সাত-পৃথিবী; এবং অন্ধ-
-কারের ছোঁয়ায় বন্ধ
করে দেয় চলাচল
এখানে মেঘ সত্যিকারের স্বৈরাচারের অঙ্কে সফল।

৩
সহসা দু’পা রেখে সতত সাবধানে
এভাবে চলতে হলে, অথবা কানে কানে
দু’কথা বলতে হলে
আমাদের সময়টাকে দু’হাতে দু’কান মলে
এখানে আনতে হবে দু’পায়ে শিকল দিয়ে;
জানি তো এসব নিয়ে
কতো না কানাঘুষা সকালে সন্ধ্যারাতে
ঘটাবে এই বরাতে—
নারীরা লম্বা পায়ের বাহুটা খালি রেখে
বাকিটা আলোয় ঢেকে
টেরেনের কামরা দিয়ে
সুবাসের পরশ পিয়ে
যখনই যায় সহসা চারিদিক হেসে ওঠে
তড়িতের গতির চোটে
আমরাও আনন্দিত
অথবা দারুণ প্রীত
হিসেবের মধ্যি বসে, জ্বালামুখ দু’হাতে ছুঁই।
পুঁটিতে ভরছে খালুই
আটকানো চোখ খুলে যেই একথা জানতে পারি—
স্বপনের দাম বেড়ে যায়, চারিদিক হাতড়ে তারই
সোয়া-চার আটআনা নেই, বাতাসের পালকি বানাই;
ভ্রমণের অন্তিমে ফের সুষুপ্তির সালাম জানাই।

৪
বুঝতে থাকে না বাকি
রাতারাতি বেড়ে ওঠা প্রলোভনের সবই ফাঁকি—
লালসালু দায়ী যথারীতি—ভুলে ভরা বিষাক্ত অধ্যায়—
যারা চায়
আমরা সতত থাকি তাদের পায়ের নিচে
সেইসব মহাপুরুষের মিছে
আহাজারি—অতঃপর
দায়ী জানি নিজ হাতে গড়ে তোলা তাদের ঈশ্বর।

৫
এবং ভয়াবহ বিপুল হতাশায় জননী কাঁদলেন;
পাষাণ বুক তার পাথরে বাঁধলেন
সদ্যজাত এক শিশুর দাসী মায়
নদীতে ভাসালেন, বুকের ধন তার যদি বা বেঁচে যায়!
কীভাবে বাঁচবে সে, কাঁদলে কে বা এসে
খাওয়াবে দুধ ভাত? কোথায় যাবে ভেসে
প্রাণের ধন এই?
অথচ বাঁচাবার ক্ষীণ এ চেষ্টার থেকে তো আর নেই
কোনোই খোলা পথ। জানলে বাদশায়
কাটবে তার মাথা এবং পুতে দেবে গভীর জঙ্গলে কিংবা সন্ধ্যায়
সবার সামনেই ছিঁড়বে দুই হাতে শরীর জাতকের
ভীষণ জল্লাদ! তাই তো ঘাতকের
হাতের পাশ থেকে ছেলেকে বাঁচাবার
ছিলো না কৌশল।
কিন্তু জল তাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো রাজার ঘাটকায়,
সোনার মতো মুখ শিশুর চোখটায় রাণীর চোখ দু'টি সহসা আটকায়:
পালক পুত্র এ 
বালকটাকে করে রাণীও মহাসুখে থাকেন আহ্লাদে—গল্প সূত্র যে
পুরাণ থেকে পাওয়া।
পাল্টে গেলো হাওয়া:
রাজার প্রাসাদেই মুসাকে তারপর
শেকানো হলো সব সমর বিদ্যা ও কিভাবে তরতর
ঘোড়ার পিঠে চড়ে দূরের রাস্তায় সহসা যেতে হয়
এ সব কিচ্ছায় কার বা সংশয়
পুরাণ জুড়ে আছে এমন মজাদার
নানান কাহিনীর সরব সঞ্চার।

যিশুও জন্মান কুমারী মার ঘরে;
বাবার মৃত্যুর ছ’মাস পার করে
আরেক অবতার ধরায় নামলেন।

মুসাও অতঃপর অনেক বড়ো হয়ে প্রাসাদ পেরিয়েই হঠাৎ থামলেন;
দেখেন  সৈন্যরা মারছে কোনো এক গরীব ক্রীতদাস।
এগিয়ে নিজ থেকে দিলেন তিনি তাকে প্রাণের আশ্বাস।
কারণ, জানলেন
এবং মানলেন
দাসের জীবনের কোনোই দাম নেই;
তাই তো রেগে মেগে সবার সামনেই
মারেন সৈন্যকে,
এই কি বলা যায় রাণী বা বদাশার প্রাসাদে অন্যকে?
রাজার সম্পদ তারই পোষা ছেলে ধ্বংস করলেন!
নামলো সংশয়, মুসাও ধরলেন
দূরের কোনো পথ; বাঁচার আর কোনো রাস্তা নেই তার
প্রাসাদ থেকে তাই
ছুটিয়ে ঘোড়া তার সজোরে সাঁইসাঁই
পালিয়ে বাঁচলেন;
নদীর পাড়ে গিয়ে স্নিগ্ধ জল দেখে একটু হাসলেন।

৬
অদ্ভূত আক্রোশে তুমি দুলে চলে যাও
পড়ে থাকে টুকরো-টাকরা ব্যথার পরাগ। তোমার আবেগী নাও
যখন বন্দর ছাড়ে
প্রবল আকাক্সক্ষা জোয়ারের মতো বাড়ে
আমার এহেন ভাঙাচোরা
কানা-খোঁড়া
অশান্ত হৃদয়ে—
কাত হয়ে
শুয়ে থাকি কিছুটা প্রহর
মনের কন্দরে নেমে আসা প্রশ্নের উত্তর
একে একে মনেই সাজাই
—নিজের শরীর নিজে কিছুটা বাজাই—
কিম্বা বাজাবার যথাসাধ্য
চেষ্টা করে যাই—আমার অবাধ্য
দেহ থেকে “নাই নাই” ধ্বনি ওঠে—
ছাগলের মতো কব্জি, হাত ও পায়ের গিরা মটমট ফোটে;
তারপর আস্তে আস্তে উঠে পড়ি
একবার টেবিলের পরে রাখা পুরোনো ঘড়ির
থেকে সময় জেনেনি;
তারপর রিমোট টেনেনি
ভিসিআর অথবা কেবল টিভির
মাথার ভেতরে নানা ইচ্ছা তখন অস্থির
প্রকাশিত হবার সতত রন্ধ্র খোঁজে—
কবিতারা এইসব কথা হয়তো কিছুটা বোঝে;
অতএব টেনে ধরে জীবনের রোখ,
তুমি উঠে গেলে জোড়া-তালি দিয়ে এইভাবে খুঁজে নেই নতুন সুজোগ।

৭
স্বাস্থ্য সম্মত এ খেলা।
বাতাসকে সাথে নিয়ে পৌষের প্রফুল্ল মেলা
বসার আগেই, হাতে পিঠে ঘাড়ে বুকে
নিয়ে, হৃদয়ের বিবিক্ত অক্ষরে টুকে
নিয়ে কিছুক্ষণ এইভাবে চর্চাভিজানে সচল
থাকা ভালো। পেশীর অচল
কোষগুলো, কিম্বা ঘুমানোর উপক্রম হয়েছে এমন
অভিজাজিত সংক্ষিপ্ত কোষগুলো আক্লেশে যেমন
নেচে উঠতেই পারে, তেমন ক্ষুধার্ত স্নায়ু
জেগে ওঠে, লতাপাতা ঝোপঝাড় গাছেদের আয়ু
দিনে দিনে বেড়ে যায়।
সকালে সন্ধ্যায়
কিম্বা মাঝে মাঝে বাতাসের ঠোঁটে
যদি চুমু এঁকে দেয়া যায়—আবেগের ফোঁটে
ফুল বাগানে বাগানে—
গানে গানে 
জেগে ওঠে শতাধিক পাখি;
দোয়েল, কোকিল; ঘুঘুদের ডাকে শোনা যায় খুব মাখামাখি!
গায়ে গায়ে মিশে যাওয়া
পায়ে পায়ে আজানের ধ্বনি—হয়তো তারও আগে খাওয়া
হয়ে গেছে ঠোঁটের সরল ঘাম;
শরীরও ডাক দিয়ে বলে গেছে শরীরের নাম।
বাতাস তখনো আছে, বাতাস তখনো থাকে
রন্ধ্রে রন্ধ্রে কোষে কোষে বসে বসে ছবি আঁকে
সুরের আবেশ টেনে ঢেউয়ে ঢেউয়ে তুলে দেয় পাল
ফুলে ফেপে ওঠে নদী, জোয়ারে মাতাল।

৮
জীবনকে সাথে নিয়ে এইভাবে
প্রতিদিন পুবের গঞ্জনা থেকে, দেখা যাবে;
আমি, তুমি, আমাদের আত্মীয় বন্ধুরা
সূর্যাস্তের দিকে, অর্থাৎ পশ্চিমে—যেখানে নারী ও সুরা
একসাথে পাওয়া যায়—নিয়ত হাঁটছে;
শতাব্দীর নতুন বাঁকের স্বাদ লোল জিহ্বায় চাটছে
আর শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর করছে পাড়া
যদিও এভাবে কারো কারো দুঃস্বপ্নের ফাঁড়া
আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে; আর সকালের সূর্যের মতন হাই তুলে
বুক খুলে
দাঁড়াচ্ছে আপাত সজীব বাতাসে
কাছারী ঘরের পাশে
অথবা নদীর তীরে
শিশির ডোবানো ঘাসে, কিম্বা মানুষের ভীড়ে
শহরে কোথাও বড়ো বাজারের কাছে
যেখানে দিন ও রাত্রি এক হয়ে মিশে আছে।

অথবা ভাবছে
পশ্চিমে দাঁড়িয়ে কোনো এক বাংলা নববর্ষে, যখন কাঁপছে
বৈশাখ জানুয়ারির বলিষ্ঠ বাহুতে, কিম্বা ওর ভালবাসা পেতে,
দিচ্ছে দুধ চিড়া গুড় খেতে
অথবা কখনো “ভাই” বলে জড়িয়ে ধরছে গলা;
জানুয়ারী তবুও যখন কাঁচ-কলা
দেখিয়ে যাচ্ছেই নিয়মিত
তখন হয়তো কিংকর্তব্যবিমুঢ়, বিস্মিত—
ভাবছে একাকী, কুকুরকে যথাযথ সম্মান দেখানো চাই,
ভদ্রতা বসত তাই
বলা ভালো, “মাননীয় কুকুর সাহেব,” কিম্বা বলা যদি হয়
“কেমন আছেন প্রিয় সারমেয় মহাশয়,”
তবে হয়তো বা গলতেও পারে মন
শক্তিশালী অ্যালসেসিয়ানের, শোভন
ভাষায় হয়তো তখন করতে পারে ঘেউ ঘেউ:
অন্তত আমরা কেউ কেউ
তখন কিছুটা থাকতেও পারি সুখে পৃথিবী পাড়ায়
যেখানে সহসা আণবিক বোমার আদ্যান্ত ভয় নিয়ত তাড়ায়
মানুষের সুখ
যেখানে সুর্যাস্ত ছোটো এক বাহারি চুমুক
দিয়ে শুষে নেয় সবটা আলোক;
পড়ে থাকে ছাই, ধুলো, ভাঙা হাড় পাখির পালক।

৯
দাঁড়িয়ে কবিতা পড়ি ক্যাফের ভেতরে।
শোনে চা-চামচ আর চিনির বো’য়াম, থরে থরে
সাজানো পিরিচ; হাসে মনে মনে—
মানুষের বানানো শোলক আহা কি গোপনে
পার হয়ে আসে শত সহস্র বছর;
তবুও ভাঙে না কারো অজ্ঞতার ঘোর।

গল্পে গল্প হাঁটে, গল্প হয় মীথ;
জড়িয়ে নানান ধর্ম বাড়ায় পিরিত।
মুসাকে নিয়েও ঘটে অনেক ঘটনা,
তাই নিয়ে আলোচনা
গোত্রে গোত্রে, রাজ্যে রাজ্যে বাড়ে অসংখ্য ব্যাঙের উপদ্রুপ,
খাবারেও জমা হয় ওদের বিশাল স্তূপ।
নদীরা বিষাক্ত হয়, রক্ত হয় জল
ফুলে পোকা ফলে পোকা, খাওয়া যায় না মাঠের কোনোই ফসল;
মিশরে দুর্ভিক্ষ—নামে ভয়ার্ত সময়;
রক্তের ফোয়ারা দেখে বাড়ে মানুষের ভয়।
মুসার চাদ্দিকে ঘটে এসব ঘটনা
তাই নিয়ে কতো আলোচনা
বসে এখানে সেখানে; দহলিজে,
কাছারিতে, হাটে ও বাজারে; উত্থিত শোনিতে ভিজে
মানুষেরা একে একে ভক্ত হয় তার—
এই কথা অবশেষে কানে যায় ফারাও রাজার;
কিছু সত্য কিছু গল্প কিছুটা বানানো
তীক্ষ্ণধার ছুরির মতন কিন্তু সবটা শানানো।

ওদিকে নদীর পাড়ে
পাওয়া দুই আশ্চর্য রমণী, মুসার সংসারে
আনে ফাল্গুনের হাওয়া।
আর, এতোটা বছর পর খুঁজে পাওয়া
ভাই,
—হতবাক হবার যদিও কিছু নাই—
পরিপূর্ণ সমর্থন দেয় যুবক মুসাকে—
ইতিহাসে হারুনও তাই নবী হয়ে থাকে।

দুই ভাই মিলে করে নানান জিকির
আস্তে আস্তে হয় তাদের কর্তব্য স্থির
আস্তে আস্তে বণি ইসরাইল জাতির জন্যে
আহা, হন্যে
হয়ে খোঁজে এক নবতর দেশ
যেখানে স্বাধীন ভাবে মেষ
রেখে, ফলিয়ে নতুন শস্য, জন্মিয়ে নতুন শিশু,
আর নতুন খোদার কাছে করে মাথা নিচু
জিকিরে কাটাবে দিন
সবার জন্যেই হবে সেই দেশে সমান আইন।
থাকবে না দাসদাসী।
ভালবাসাবাসি
আর হৃদয়ের পরম আদরে
ঢেকে দেবে সেই দেশ প্রাণবন্ত মেঘের চাদরে।

১০
লাঠি ফেলে দিলে দ্বিধা হয় নদী;
এমন দরদী
জল কোথাও দেখিনি—
আর যদি তিনি
সেই পথে হেঁটে যান দলবল সহ

এমন ঘটনা হবে অর্থবহ
এটাই হয়তো স্বাভাবিক
একবিংশ শতাব্দীর কোনো এক মিথুন ধার্মিক—
বিজ্ঞান বলেই কথা!
ঘটনার হুবহু দিলেন সবুজ বারতা—
খুঁজে পেয়ে ঘোড়ার গাড়ির চাকা
নীল নদের তলায়, বাঁকা
হয়ে নিজের গলায়
টেনে সবটুকু জোর
ভেঙেও দিলেন সেই সত্যতার ঘোর:
অতএব বণি ইসরাইলের বিশাল বহর
ছেড়ে; ডুবিয়ে ফেরাউনের সশস্ত্র বাহিনী
একে একে কাহিনির
খুললেন সবগুলো দ্বার
ইহুদীরা সেই মতে নতুন আহার
পেলো; পেলো শস্যময় নতুন জমিন
পুব দিকে উঠে সূর্য শুরু হলো আরেকটা দিন।

১১
ক্ষিধে তার লেগেছিলো পরে;
যৌবনের অন্য ক্ষিধে টানটান ঘরে ঘরে
বয়ে গিয়েছিলো। অমান্য তারাও
করেছিলো মুসা হারুণের ধারা।
নাচে গানে, মূর্তির পূজায়, নিয়ত সঙ্গমে
চেয়েছিলো আরো স্বাধীনতা। কমে
গিয়েছিলো নাকি হৃদয়ের ভয়।
সব গল্পে যেমনটি অহরহ হয়;
অতএব অমান্য মুসাকে করে
চারশ’ বছর ঘোরে
তারা অভিশাপে বনে বনে, পথে
প্রান্তরে—স্বদেশ এইভাবে নিজেরা হারিয়ে।
কষ্টে-সৃষ্টে-স্বপ্নে পাওয়া সেই দেশ
খুঁজে পেতে হলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম নিঃশেষ।

ইয়োরোপে পথে পথে ঘুরে
বৃষ্টিতে দারুণ ভিজে আর কড়া রোদে পুড়ে
চড় লাথি গুঁতো খেয়ে,
বিংশ শতকের যুদ্ধে রক্তের বিষণ্ণ স্রোত বেয়ে
অতঃপর স্বহস্তে জ্বালিয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার গেরাম
ফিরে পেলো সেই দেশ। পূর্ব পুরুষের নাম,
ফলকে টানানো বড়ো বড়ো দারুণ পদবী সেখানে আবার ওঠে;
পারমাণবিক যুদ্ধের আবহ ছোটে
সেইসব নতুন প্রদেশে—
মুসা ও হারুণ আবারো আসেন আণবিক অরহেডে ভেসে।

১২
আটকানো এক সভ্য তাঁতে,
আটকে গেলাম মধ্যরাতে।
ইতর বিশেষ সুগোল আদর
লেংটি পরা নতুন বাদর
ভেংচি কাটে। এই আমাদের
নিময় কানুন  ভালুক বাঁধের
সব থেকে যায়
কাণায় কাণায়;
কিন্তু তাতে বিষের বাঁধন—
ভজন সাধন
সাধন ভজন—
আটকে গেলাম আমরা ক’জন;
জোড় শিকলে শিকল টানা,
হারে না না, হারে না না;
কাব্য পড়ে হয় না খাবার
মধ্যরাতে আটকে যাবার
পাকে বাঁকে থাকে খাঁচা
এই আমাদের শক্ত বাঁচা, কেমনতর শক্ত বাঁচা।

১৩
পোড়া
সময়ের ছাই নিয়ে জোড়া
দেয়া জীবনের তার
ছিঁড়ে বার বার
হামাগুড়ি দেই অনন্ত রাস্তায়;
জোড়া দিতে চাই সযত্নে আবারো।
কায়ক্লেশে উঠে আসি গাঢ়
এক অন্ধকারে—হাটে মাঠে বাটে
তার অজস্র বিস্তার; জিভ চাটে।
জীবনের গুঁড়োগুলো খুঁজে নিতে
সেইসব গভীর গহন রাতে ভয়াবহ শীতে
ঠকঠক করে ওঠে আমাদের হাড়
পার হওয়া তবুও যায় না সুদীর্ঘ অন্ধকারের তামাম পাহাড়।



Contact Us