NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com


সব গ্রন্থই পবিত্র
অতএব জিকির থামিয়ে বলো
এতোকাল ক'খানা পড়েছো।

সব ঘরই পবিত্র
অতএব তাণ্ডব থামিয়ে বলো
তুমি তার ক'খানা গড়েছো।



সাহিত্য/কবিতা



রেজানুর রহমান রেজা

অনুপম শব্দমঞ্জুরীময় : শব্দগুচ্ছ

কবিতার কাগজ ‘শব্দগুচ্ছ’র জুলাই-ডিসেম্বর,২০০৯ সংখ্যার সম্পাদকীয়র সুগম তোরণ দিয়েই যাত্রা শুরু করা যাক কবিতার উপত্যকায়। সম্পাদক হাসানআল আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কবিকেও অপেক্ষা করতে হয় যুগ যুগ; কখনো শতাব্দী। তাঁর ভাষা, তাঁর বিন্যাস অন্যের মতো হোক, তাঁর বলা বা চলা পরিচিত গন্ডীর জালে আটকে যাক— বোদ্ধাদের লক্ষ্য থাকে তাই।এর বাইরে গেলেই কবির মরণ। তাঁর সমালোচক হয়ে যান একে একে সবগুলো চোখ। অথচ সেই চোখও হয়তো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়; ততো দিনে বহুদূরে চলে যায় সময়ের স্রোত’।

কাব্য-প্রেমের ছোট নদীর মিহিন স্রোতধারায় আমাদের মননের সোনার তরীটি কুল ছুঁলে হালকা কুয়াশা সরিয়ে দেখি ‘পায়ে হাঁটা পথ’-এ ব’সে আছেন আবু হাসান শাহরিয়ার।তাঁর ‘পুনরুজ্জীবন’ উত্তরাধুনিক ক্লাসিকতার স্বাদে মুগ্ধকর :

নৌকা থামাও। ঝাঁপ দেবো কালো জলে
ফেলে আসা পথ সাঁতারেই দেব পাড়ি।
তোমাদের গড়া জীবনের কোলাহলে
তাকালেই দেখি মৃত মুখ সারি-সারি।

জানি ফিরে গেলে সবাই ফেরাবে মুখ
সবাই থাকবে নিরাপদ ব্যবধানে।
তবু খুঁজে নেব উদগ্রীব-উৎসুক
সেই চোখ, যার নাম দেবদারু জানে।

‘নি:সঙ্গ’ নাজনীন সীমন ‘দূরাগত শব্দের’ খোঁজ করলেও চারপাশের শব্দগুলোকে চেনা অথচ নবীন ও মুগ্ধময় আঙ্গিকে পেশ করেছেন। তাঁর অভিনব উচ্চারণ:

… বহু দূর থেকে ভেসে আসা শব্দাবলী
করাত-ধারের তীক্ষ্ণতায় আছড়ে
পড়ে নি:সঙ্গ আমার উপর ঠিক যেনো টগবগে
ফুটন্ত চায়ের জল, আর্তনাদ করতেই
সরীসৃপের মতো নৃশংস হেঁটে চলে শুকনো বিল—
(দূরাগত শব্দের খোঁজে)

শম্ভূ রক্ষিত’র ‘অনুভূতির…স্বার্থহীন’ ‘রোশনি অভ্যর্থনা’ময় ‘যাত্রা’র সংগী আমরাও:

আমি প্রথম উঁচু হয়ে নীচে দৌঁড়ে যাই
আমি তোমার অস্তিত্ব চেপে ধরি

আমি বাতাস ধরে ঘূর্ণির ধারে তোমাকে প্রথম ঝুঁকে দেখি

কালিকৃষ্ণ গুহ’র কবিতা বার বার নতুন ক’রে পড়ার মতো।আজ এই কোনো কোনো নিরেট, আকাল-অকাল আবর্জনাময় গদ্যের গায়ে পদ্যের পোস্টার লাগানোর কালে কালিকৃষ্ণ’র কথাগুলো নিষ্কলুষ কাব্যিকতা:

দূরে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না আর।

এখন শুধু ঘুরে ঘুরে আমগাছগুলি দেখি—
অজস্র মুকুল এসেছে এবার।
শুভেচ্ছার মতো সব আমের মুকুল।

দূরে কোথাও যাই না।

সারাদিনের অপেক্ষার পর পূরবীর সুর…
(শুভেচ্ছা)
...

আশা করি আমার আগের চিঠিটা
তোমার হাতে পৌঁছেছিল।
না-পৌঁছলেও অবশ্য কিছু নয়।

কারও কথা্ই কারো কাছে
শেষপর্যন্ত পৌঁছয় না।
এই শূন্যতায় আমাদের বসবাস, উৎসব,
কবিতা লেখা।

আমরা অতিক্রম করে যাচ্ছি
কতকালের ঝড়বৃষ্টির সময় নীরবতার সময়
শান্তির সময়।
(দ্বিতীয় চিঠি)

এরকম সত্যিকার কবিতার মুক্তোর আভায় উজ্জ্বল হয়ে আছে বরাবরের মতো ‘শব্দগুচ্ছ’র এই সংখ্যাটিতে—

………… অন্তর্গত সবুজ হারিয়ে
সেই বনলতা সেন—এখন শুধুই বৃষ্টিহীন বৈশাখ
তার চোখে অশ্লীল লোভের ফণা। সে এখন অন্তর্বাসের ভেতর
সযত্নে লুকিয়ে রাখে একশ’ সাতটা মসৃণ প্রকল্প।

(আনিসুর রহমান অপু / অন্তর্গত সবুজ হারিয়ে)

….আমি পাহারা দিচ্ছি এই ঘুমন্ত শহর
যতক্ষণ না আমার প্রতিবেশীরা
নক্ষত্রের খোলা ভেঙে বেরিয়ে আসছে বাইরে।
(বিশ্বজিৎ মন্ডল / আমার শহর)

অন্যদিনের মতোই লাগছে আজকের সকাল
শুধু সূর্যটা অনেক উঁচু ঘুড়ির মতো চুপ হয়ে আছে
আলোর সুতো নাড়িয়ে দিয়েছে হাওয়া।

কিছুটা দূরের ফুলের মধু খেতে যাবে
ভাবছে প্রজাপতি।
ঝুরঝুর আলো ঝেড়ে ফেলছে ব্যস্ত পাখনা থেকে।
(রেজানুর রহমান রেজা / অন্যরকম দিন)

শেকড়ভর্তি পায়ে রহস্য আর রহস্য
যেন গলি; গলির পরে তস্য—
গলি; কী এক রহস্য রেখে—এবার তবে যাই…
ঐ একটা কথার জন্যেই আজ আমরা
পৃথিবীর শক্ত বুক মাড়াই;
(রাসেল আহমেদ / লোকটা চ’লে গেলো)

এখানে অধুনা সভ্যতার আছে প্রতিটি আঁচড়
আছে আলোর মিছিল, উন্মুক্ত হোয়াইট ওয়াইনের নেশা
নগ্ন নৃত্য আর ক্যাসিনোয় তুমুল গুটিবদল…
(উদয় শংকর দুর্জয় / সভ্যতার নগরায়ণ)

শা্হ্ ফজলে রাব্বি’র “বাংলা কবিতা; শতাব্দী পরিক্রমা” তথ্য-নির্ভর, ভরাট আলোচনা। মাত্র দুটি পাতায় তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে ধ’রে রাখতে হয় শতাব্দী-দীর্ঘ কবিতার দীঘল আলো।তাঁর গুরু-গম্ভীর প্রজ্ঞায় প্রশ্রয় পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ,শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ,রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ,আবিদ আজাদ, আবু হাসান শাহরিয়ার, হাসানআল আব্দুল্লাহ, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, রহমান হেনরী, প্রবীর দাশ, শামীম রেজা, নাজনীন সীমন থেকে রুকসানা রূপা পর্যন্ত। শাহ’র আলোচনার অস্তাচলের মিহিন আলোয় আলোকিত হওয়া যাক: “এখন সম্ভবত একথা বলা ঠিক হবে যে যুগ-ধর্মই নির্ণয় করে একজন কবি বা সাহিত্যকের শ্রেষ্ঠত্ব।উত্তরাধুনিক কবিদেরও শেষ পর্যন্ত ওই কালের কাছে নত হতে হবে।নিরবধি কালই সাক্ষ্য বহন করে শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের”।

ইংরেজি কবিতা লিখেছেন, বব হোলম্যান, রিচার্ড মার্কস উইনর্যব, ক্রিসটিনা এম. র্যয়ু, ব্যাবেট অ্যালবিন এবং একক সৌবীর।আবু হাসান শাহরিয়ার ও নাজনীন সীমন-এর কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে নাজিব ওয়াদূদ ও হাসানআল আব্দুল্লাহ।

‘পোয়েট্রী ডায়ালগ’ এক নির্মল হাস্য-কাব্য-মাহফিলময় অধ্যায়। দারুণ উপভোগ্য। কথার মজবুত তীরগুলো সব বাংলায় হলে যুদ্ধ আরও জমতো।




Contact Us