|
সংবাদ
|
|
নিউইয়র্কে নতুন বইয়ের গল্প বললেন ছয় বিশিষ্ট লেখক
(বাম থেকে) ধনঞ্জয় সাহা, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, বেলাল বেগ, নাজনীন সীমন ও হাসানআল আব্দুল্লাহ
এনওয়াইনিউজ৫২:
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ছয় বিশিষ্ট লেখক ভিন্ন ভাবে শুরু করলেন বিজয়ের মাস। ৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা জ্যাকসন হাইটসে একত্রিত হলেন সদ্য
প্রকাশিত নতুন বই নিয়ে; মেতে উঠলেন বইয়ের গল্পে। বইকে ছাপিয়ে জীবনের গল্পও উঠে এলো অত্যন্ত সাবলীল ভাবে। কবিতা পত্রিকা শব্দগুচ্ছ ও এনওয়াই নিউজ
৫২ ডট কম আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হলো ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদানের প্রতি, যাঁরা যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়ের পতাকা।
বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্ত দুই গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পূরবী বসু বললেন যথাক্রমে তাঁদের উপন্যাস ‘শূন্য নভে ভ্রমি’ ও ‘অবিনাশী যাত্রা’ নিয়ে।
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তাঁর উপন্যাসটিকে ‘ছোটো উপন্যাস’ অভিধায় অভিহিত করে জানালেন যে তিনি যেভাবে একসময়ে নতুন ধরনের গল্প লেখা শুরু করেছিলেন ঠিক তেমনি উপন্যাসের জগতে
একটি নতুন ধারা নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন এই বইয়ের ভেতর দিয়ে। অন্যদিকে পূরবী বসু অনাবাসি বাংলাদেশীদের অভিজ্ঞতা, জীবনের পরতে পরতে জড়ানো কষ্ট ও
দেশে ফিরে যাবার আকুতি ইত্যাদি নিয়ে রচিত তাঁর উপন্যাসের সময় ও কালখণ্ডকে উপস্থাপন করলেন তাঁর স্বভাবসূলভ সাচ্ছন্দে।
উভয় লেখকই আলোচনার শুরুতে তাঁদের লেখক হয়ে ওঠার এবং এক সঙ্গে দীর্ঘ জীবন পাড়ি দেবার অভিজ্ঞতা তুলে ধরলেন শিল্পীর নিপূণতায়।
এক সময়ের বাংলাদেশ টেলিভিশনের তুখোড় প্রোগ্রাম নির্মাতা বেলাল বেগ, যু্দ্ধকালীন তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে বললেন একজন বাঙালী পুলিশের গল্প,
যিনি তাঁর এবং তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তাছাড়া বছরের পর বছর বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে পায়ে হেঁটে তিনি যেভাবে দেশটিকে দেখেছেন, যে দেশ মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিলো,
তিনি জানালেন, সেই দেশের কথা তিনি তাঁর ‘একাত্তরহীন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। সন্দীপে বেড়ে ওঠা এই ধীমান লেখক বললেন তাঁর ছোটো বেলার কথা,
লেখক হয়ে ওঠার কথা, জীবনকে আবিষ্কারের কথা।
এনওয়াই নিউজ ৫২ ডট কম সম্পাদক ও নিউইয়র্ক সিটি হাইস্কুল সিস্টেমের ইংরেজীর শিক্ষক নাজনীন সীমন বললেন তাঁর চতুর্থ গ্রন্থ, কবিতার বই,
‘বিশেষণের বিশেষ বাড়ি’র কথা। কিভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্র সাহিত্য পরিষদ’-এর আসর থেকে তিনি ঢুকে গেলেন সৃষ্টিশীল সাহিত্যের ভুবনে সেই গল্প বললেন তিনি।
তাঁর লেখা প্রথম গল্প প্রয়াত শিবনারায়ণ রায় সম্পাদিত ‘জিজ্ঞাসা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার আনন্দের কথা, প্রথম বই প্রকাশের কথা, জীবনের পথে সাহিত্যের সিঁড়ি
বেয়ে নিয়মিত অবগাহনের কথা, তাঁর বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের কথা। তাঁর এই নতুন কাব্যগ্রন্থ থেকে তিনি দুটি কবিতাও পড়ে শোনালেন।
কবি ও বিজ্ঞানী ধনঞ্জয় সাহাও স্মৃতি হাতড়ে চলে গেলেন তাঁর গ্রামে যেখানে ক্লাস ফোরে পড়াকালীন ছড়া দিয়ে তাঁর লেখা শুরু। নানা গল্পে তিনি অন্যান্যদের মতো শ্রোতাদের মোহাবিষ্ট
করে তুললেন যেনো যাদুকরী শব্দের স্পর্শে। ধনঞ্জয় সাহা তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেম পাথরের কারখানা’ থেকে কবিতা পড়ে মুগ্ধ করলেন। তিনি আরো জানালেন, ইংরেজীতে লেখা
তাঁর জীবনী গ্রন্থের প্রথম পর্ব কানাডার এক খ্যাতনামা প্রকাশক গ্রহণ করেছেন। অচিরেই বইটি বাজারে আসার কথা রয়েছে।
সব শেষে এলেন কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ তাঁর সদ্য প্রকাশিত উপন্যাস ‘ডহর’ নিয়ে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালীন গৃহ শিক্ষকের উৎসাহে তিনি প্রথম কলম
তুলে নিয়েছিলেন, সেই সময়ের লেখার প্রথম শ্রোতা ছিলেন তাঁর মা যিনি আবেগে বলে উঠতেন ‘এইসব কিভাবে তুই লেখিস’! মায়ের এই বাক্যই ছিলো তার তখনকার ‘ইনসপেরেশন’।
তিনি বললেন, আমেরিকায় বসবাসরত বাঙালীদের নিয়ে রচিত তার এই উপন্যাস যেখানে কষ্ট-ক্লান্তিসহ রয়েছে তাদের উত্থান পতনের ঢেউ, আছে গ্লবল ওয়ার্মিংয়ের অনিবার্য ভয়াবহতার কথা,
স্বপ্ন ও স্বপ্নহীনতার কথা, বৃহৎ অন্ধকার ও আলোর কথা। এক প্রশ্নের জবাবে হাসানআল আব্দুল্লাহ বলেন, “সেদিন বাংলাদেশের এক দৈনিকে দেখলাম লেখা হয়েছে কোনো এক
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘অন্যতম প্রবাসী কবি শহীদ কাদরী!’” তিনি বলেন, এই হলো আমাদের অবক্ষয়ের চিত্র; শহীদ কাদরী যদি প্রবাসী কবি হন,
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত যদি প্রবাসী লেখক হন, তিনি প্রশ্ন করেন, “তাহলে বাংলাভাষার প্রধান কবি, প্রধান লেখক কারা?”
অনুষ্ঠানে কবি আলেয়া চৌধুরী, কবি শামস আল মমীন ও কবি আনিসুর রহমান অপু কবিতা পড়ে শোনান। এর আগে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে
এই অনুষ্ঠানে ছুটে আসা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহিত্যামোদিদের স্বাগত জানিয়ে অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মাদউল্লাহ।
মামুন'স টিউটরিয়ালসে এ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত। পরিচালনা করেন শব্দগুচ্ছ সম্পাদক কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ,
ক্যামেরায় ছিলেন একক সৌবীর। সার্বিক সহযোগিতা করেন স্বীকৃতি বড়ুয়া, আনিসুর রহমান অপু ও ভূঁইয়া আহসান হাবীব।
|
|
|
|