শিরোনাম ।।আরো সংবাদ।। সংখ্যা ২ সংখ্যা ৩ সংখ্যা ৪ সংখ্যা ৬ সংখ্যা ১৭ সংখ্যা ২৪ সংখ্যা ২৫ সংখ্যা ২৬ সংখ্যা ২৭ |
পুলিশের উপর আক্রমণ ও মানবাধিকার চর্চা
হাসানআল আব্দুল্লাহ ফেসবুকে জনৈক মোহম্মাদ তাহের আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। বলেছেন, “তোকে এ দেশ থেকে বিতাড়িত করবো।” তিনি এই বাক্যের আগে ও পরে অকথ্য ভাষায় দুটো গালিও বরাদ্দ করেছেন আমার জন্যে। অবশ্য গালি খাওয়ার অভ্যেস যে আমার নেই তা হলপ করে বলা যাবে না। সপ্তায় সপ্তায় না হলেও অন্তত দু’একমাস যেতে না যেতে কেউ না কেউ বুঝে ফেলেন যে এই লোককে দু’চারটে গালি না দিতে পারলে নিস্তার নেই। আমাকে গালি ছুঁড়ে দেয়া এই মানুষগুলোর সবাই যে তাহের সাহেবের মতো নব্য রাজাকার বা রাজাকারের উত্তরসূরী তা কিন্তু বলছি না; এদের মধ্যে কেউ কেউ তথাকথিত কবিও রয়েছেন। কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা এবং সাহিত্যের সমালোচনা করতে যাওয়ায় এদের অনেকেই আমার উপর ক্ষেপে যান এবং তারই বহিপ্রকাশ ঘটানোর জন্যে দু’চারটে গালি যথাসময়ে বরাদ্দ করে দেন। আমি অনেক ক্ষেত্রে এগুলো বসে বসে হজম করি, নয়তো নিভৃতে ওদেরকে বন্ধু লিস্ট থেকে বাদ দিয়ে দেই। আবার কখনো কখনো ওইসব গালি আমার সম্পাদিত পত্রিকা ‘শব্দগুচ্ছ’র চিঠিপত্র কলামে ছেপে দিতেও দ্বিধা করি না, কারণ আমি মনে করি আজ যা ঘটছে, আমি যা করছি বা এই মুহূর্তে অন্যরা যা করছেন সবই ইতিহাসের অংশ। এর ভালো মন্দের বিচার আগামীর হাতে। অতএব দালিলিক প্রমাণ থাকাটা জরুরী। কিন্তু তাহের সাহেব আমাকে গালি দিলেন কেনো? তার কিইবা ক্ষতি আমি করেছিলাম যে তিনি আমাকে দেশ ছাড়া করতে চাইলেন! না, আমি তার কোনো ক্ষতি করিনি, ফেসবুকে তার ওয়ালেও আমি কিছু লেখিনি, অন্য কারো ওয়ালে কিছু লেখা আমার স্বভাবের বাইরে। আমি শুধু নিজের ওয়ালে লিখেছিলাম, “পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে কোনো দেশে কেউ পার পায় না; হয়তো সাথে সাথে মৃত্যু ঘটে, নতুবা ক্ষতবিক্ষত হয়ে বন্দি অবস্থায় হাসপাতালে যায়। শুধু বাংলাদেশেই এর ব্যাতিক্রম! কেনো?” আমার লেখা এই “কেনো”র জবাবে তিনি আমাকে দেশ ছাড়া করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। কি চমৎকার! কিন্ত এই আপাত চমৎকার সাহাসটি তার কোথা থেকে এলো? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে আমাদের ৪২ বছর আগে ফিরে যেতে হয়। এবং সেই থেকে পর্যায়ক্রমে ওদের শক্তি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া সচেতন মহলের কারো অজানা নয়। একজন সেক্টর কমান্ডার ক্ষমতা দখলের জন্যে সাড়ে এগারো হাজারকে জেল থেকে ছেড়ে দেন, এবং শাহ আজিজ নামে এক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী রাজাকারকে ক্ষমতায় বসান। ওদিকে ক্যাডার বাহিনি গড়ে তোলার লক্ষে ধর্মের নাম করে ওরা দেশের নানা স্থানে নানা রকম স্থাপনা, শিক্ষালয়, মকতব-মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ব্যাঙ্ক, বিমা সহ হাজারো রকম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে সুপরিকল্পিত ভাবে অর্থবিত্তে সয়ংসম্পূর্ণ হতে থাকে। স্বপরিবারে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ককে হত্যা করে যে দেশকে তারা চায়নি সেই দেশের কর্তা বনে যায়। এবং কালে কালে এমন শক্তি সঞ্চয় করে যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির উপরও ঝাপিয়ে পড়েতে দ্বিধা করে না। ফলতঃ জনাব তাহের যথেষ্ট বুদ্ধিমান বলেই আমার ওই “কেনো”র জবাব তিনি দেন অন্যভাবে। লাদেনীয় সন্ত্রাসবাদের ভাষায়। ২. বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সুযোগ পেলেই জামাত-শিবির পুলিশের উপর হামলা করছে, এবং নির্বিচারে পুলিশ মার খাচ্ছে। এমন কি গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ধরে নিয়ে একজন পুলিশকে হত্যা করে তার লাশ ফেলে রেখেছে। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের দিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচজন পুলিশকে হত্যা করেছে, পর দিনও আহত একজন মারা গেছেন। তাছাড়া খবরে জানা গেলো চট্টগ্রামে ২০জন পুলিশের দল থেকে একজনকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করার পর মারা গেছেন কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্যে মাথার ভেতরে খোন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এবং অন্য ১৯জন একটি দালানের দোতলায় আশ্রয় নিলে শিবিরের গুণ্ডারা কলাপসিবল গেটে তালা মেরে চারদিকে পেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেয়; খবর পেয়ে ১৮জন পুলিশের একটি ফোর্স গুলি করতে করতে ছুটে এসে সহকর্মীদের নিশ্চিত পুড়ে মরার হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু কেনো? পুলিশ কেনো পড়ে পড়ে এই ভাবে মার খাবে? পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে পুলিশের গায়ে হাত দেয়া তো দূরের কথা, হ্যান্ডস আপ বলার সাথে সাথে হাত না তুললে নিশ্চিত ফায়ার, আর ওই সময় পকেটে হাত দিলে তো কথাই নেই, গুলি এসে বুক ঝাঝরা করে দেবে। এবং এই মৃত্যুর তদন্তও হবে, কিন্তু আত্মরক্ষার জন্যে পুলিশের গুলি করার বিষয়টি প্রমাণীত হলে কেস থেকে পুলিশ অভ্যহতি পাবেন। অতএব পুলিশের গুলি চালানোর এবং দুর্বিত্তকে হত্যা করার উদাহরণ আমেরিকা সহ ইয়োরোপের দেশে দেশে প্রায়ই চোখে পড়ে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এইসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ‘মানবাধিকার গেলো’ ‘মানবাধিকার গেলো’ স্লোগান তুলে ছুটে আসে না। কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশের হাতে বা আত্মরক্ষার্থে রাবের হাতে কেউ মারা যায় তো দেশীয় মানবাধিকার সংস্থা সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো হই হই করে ওঠে। অথচ, পুলিশের উপর হামলা এবং নির্বিচারে পুলিশ পিটানো ও হত্যা করার জন্যে ওইসব সংস্থা নীরব ভূমিকা পালন করে। আমার কাছে এ এক অদ্ভূত আচরণ মনে হয়। এবং এই আচরণের পিছনে পুলিশ বাহিনি বা সরকারের কোনো দুর্বলতা রয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। তবে প্রায়ই দেখি ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়েও মন্ত্রীরা এমন লেজে-গোবরে করে ফেলেন যে মনে হয় ওঁরা নিজেরাই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন নন। ফলত জামাত-শিবির সহ সন্ত্রাসী বাহিনি সুযোগ পেলেই পুলিশের উপর চড়াও হয়। ৩. আগেই বলেছি আমাকে গালি দিলে কিম্বা ভয় দেখালে আমি সাধারণত নীরব থাকি। কিন্তু এবার আর নীরব থাকিনি। পাল্টা জবাবে ভদ্রলোককে বলেছি নিজের কাপড় ঠিক রাখতে। হ্যাঁ, খবরে এসেছে যে সাঈদীর গায়ের কাপড় খুলে তাকে কয়েদির পোষাক পরিয়ে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এবং আমার ধারণা ২০১৩ সাল হবে রাজাকারদের গায়ের কাপড় খুলে নেয়ার বছর। অতএব শেষ বারের মতো একটু লাফালাফি ওরা করবেই। এমতাবস্থায় দরকার শুধু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনির আরেকটু কঠোর হওয়া, ঠিক পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতোই। |
Contact Us