শিরোনাম নিজামীরা একাত্তরে যা যা করেছেন... |
রাজাকারের বিচার চাই জামায়াতের একটি ফ্রন্ট হয়ে গেল বিএনপি
মুনতাসীর মামুন ॥ অবশেষে সব লুকোচুরি শেষ। রহস্যময় কথাবার্তা, রহস্যময় আচরণ, সবই শেষ হলো। বিএনপি এবং জামায়াত যুদ্ধাপরাধ বিচারে তাদের নিজ নিজ অবস্থান পরিষ্কার করল। আমরা যা অনুমান করেছিলাম, তাই হলো। এর অন্যথা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে বিএনপির কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল হয়ত তৃণমূলের চাপে তারা বাসত্মবে, মানবতাবাদী ধারায় ফেরত আসবে। কিন্তু তা হয়নি। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব থাকতে তার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রায় সময় মৌতাতে থাকা, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন দাবি করেছেন, "দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকারীভাবে যাদের যুদ্ধাপরাধী বলে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তাদের তৎকালীন আওয়ামী সরকারই মুক্তি দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামী লীগ সরকারই করেনি। এটাই ঐতিহাসিকভাবে সত্য। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপৰকে দমনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।" [প্র. আলো. ৩.৪.২০১০] মাথাখালি নামে [বহুল] পরিচিত, এমকে আনোয়ার জানিয়েছেন, "যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মানবতাবিরোধী হলে বিএনপি প্রতিহত করবে।" [ভোরের কাগজ ৪.৪.১০] আমরা বুঝতে অৰম, যুদ্ধাপরাধ/মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হলে বিএনপির সমস্যাটা কোথায়? তাদের আরেকটি অভিযোগ, এই ট্রাইবু্যনালের মাধ্যমে রাজনৈতিক হয়রানি করা হবে। এই যুক্তি বুঝতেও আমরা অৰম। ধরা যাক, আপনার দলে অনেক চোর ডাকাত ধর্ষক ঢুকে পড়েছে। আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হওয়া জরম্নরী। জনস্বার্থে আপনি তাদের বহিষ্কার করবেন, না অাঁকড়ে ধরবেন? সে রকম বিএনপিতে যদি যুদ্ধাপরাধী থেকে থাকে তাদের বহিষ্কার করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচার করবে বলে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করছে এটি ঠিক নয়, এটি তাদের নির্বাচন ম্যানিফেস্টোতে ছিল না। এ প্রচার সর্বৈব মিথ্যা ও বিভ্রানত্মিকর। যে আইনে বিচারের কথা হচ্ছে তার নাম_ 'আনত্মর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইবু্যনালস) আইন, ১৯৭৩।' "জাতীয় সংসদ প্রণীত নিম্নবর্ণিত আইন ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্মতিদানকৃত এবং এতদ্দ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য প্রকাশিত হলই। ১৯৭৩ সালের ১৯ নং আইন আনত্মর্জাতিক আইনের অনুসরণে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক, বিচার এবং শাসত্মি প্রদানের যথোচিত ব্যবস্থা করার জন্য আইন"... সংবিধানের ৪৭/১ এ ধরনের আইনের 'হেফাজত' করা হয়েছে এবং স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে_ "এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আনত্মর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরৰা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য কিংবা যুদ্ধবন্দীকে আটক, ফৌজদারীতে সোপর্দ কিংবা দ-দান করিবার বিধান সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসমঞ্জস বা তাহার পরিপন্থী, এই কারণে বাতিল বা বেআইনী বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনী হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না।" মানবতাবিরম্নদ্ধ অপরাধসমূহ বা যুদ্ধাপরাধ বলতে কী বুঝব তা বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর 'আনত্মর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইবু্যনালস) আইন, ১৯৭৩ সহজ পাঠ' পুসত্মিকায় সহজভাবেই উলেস্নখ করা হয়েছে__ "মানবতাবিরম্নদ্ধ অপরাধসমূহ : যথা, বেসামরিক জনসমষ্টির যে কাহারো বিরম্নদ্ধে কৃত নরহত্যা, উচ্ছেদ, ক্রীতদাসতুল্য জবরদসত্মি, বিতাড়ন, কয়েদ, অপহরণ, আটক, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা অপর মানবিক কার্যসমূহ কিংবা রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত, উপজাতিগত বা ধমর্ীয় কারণে শাসত্মি প্রদান যেখানে অপরাধ সংঘটন হইয়াছে তাহা সে স্থানের প্রচলিত আইনবিরম্নদ্ধ হোক কিংবা না হোক।" "যুদ্ধাপরাধ : যথা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে যুদ্ধের আইন কিংবা প্রথা ভঙ্গ করিয়া_ যাহার অনত্মভর্ুক্ত, কিন্তু সীমিত অর্থে নহে__ বেসামরিক জনসমষ্টির বিরম্নদ্ধে নরহত্যা, নির্যাতন, জবরদসত্মি-শ্রমে স্থানানত্মরিত কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধন করা; যুদ্ধবন্দীদেরকে কিংবা সাগরে অবস্থানরত ব্যক্তিদেরকে হত্যা কিংবা নির্যাতন করা, সরকারী কিংবা বেসরকারী সম্পত্তি লুটতরাজ করা, সামরিক নিরস্ত্রয়ানে নির্বিচার নগরগুলি, শহরগুলি কিংবা গ্রামগুলি ধ্বংস করা কিংবা বিধ্বসত্ম করা।" বিএনপি 'ট্রাইবু্যনালস', 'যুদ্ধাপরাধ' ও 'সংবিধান' নিয়ে প্রশ্ন তুলে এখন বলছে, এগুলো যথাযথ নয় এবং 'মানবতাবিরোধী অপরাধে' বিচার করার অর্থ হচ্ছে প্রতিশ্রম্নতি থেকে সরে আসা এবং রাজনৈতিক উইচ হান্টিং। এসব অভিযোগের কোনটাই সত্য নয়। এ ট্রাইবু্যনাল ও বিচার করার অধিকার সংবিধান প্রদত্ত। এবং আইনটি হয়েছে ১৯৭৩ সালে তখন বিএনপি হয়নি এবং ধর্মব্যবসায়ীদের দল হিসেবে জামায়াত ছিল নিষিদ্ধ। 'যুদ্ধাপরাধ' ও মানবতাবিরোধী' অপরাধসমূহ প্রায় একই ধাঁচের। আসলে বিএনপি যেটা ভাবছে তা হলো, এই ধারায় জোট আমলের তাদের কৃত অপরাধগুলোর বিচার যদি করা হয় তা হলে তারা ফেঁসে যেতে পারে। বর্তমান নেতৃত্বের ভয় এটি। বিএনপির অনেক নীতিনির্ধারককে বলতে শুনেছি, আইনমন্ত্রী, এ্যাটর্নি জেনারেল আমেরিকা থেকে ফেরার পর সরকার সুর পাল্টে ফেলছে। অর্থাৎ আমেরিকার পরামর্শে তারা এসব করছে। লৰণীয় ঐ দু'জনের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরও গিয়েছিলেন এবং মূল উদ্দেশ্য ছিল, অনুমান করছি, বেগম জিয়ার দু'পুত্র যে টাকা পাচার করেছেন তার প্রমাণ সংগ্রহ করা। নয়ত, তাদের সঙ্গে গবর্নরের যাওয়ার কথা নয়। বিএনপি এ বিষয়টিকেই ধামাচাপা দিতে যাচ্ছে এসব মনত্মব্য করে। বিএনপির বর্তমান কর্তাদের একমাত্র লৰ্য হচ্ছে বেগম জিয়া ও তার দুই পুত্রকে সব রকমের সুরৰা দেয়া। এতে দল ৰতিগ্রসত্ম হলেও তাদের কিছু আসে-যায় না। আরও উলেস্নখ্য, আইনমন্ত্রীকে আমি টেলিভিশনে বলতে শুনেছি, ১৯৭১ সালে কৃত অপরাধের বিচার হবে। সে সময় তো বিএনপি ছিল না। সুতরাং তাদের সমস্যা কী? একমাত্র সমস্যা তাদের দলের নেতৃস্থানীয় কয়েকজন ১৯৭১ সালে বিভিন্ন হত্যাকা-ের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কয়েকজনকে রৰা করার জন্য বিএনপি এখন যুদ্ধাপরাধ বিচারের সমালোচনা করছে। অর্থাৎ, যুদ্ধাপরাধীদের রৰায় এগিয়ে আসছে। দেখা যাচ্ছে, বিএনপির ৰেত্রে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। অথচ, অপনারা কি বিশ্বাস করবেন যে, মাত্র একদশক আগে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুধু নয়, জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিল। আমরা পুরনো কথা ভুলে যাই দেখে বর্তমানে সিদ্ধানত্ম নিতে অসুবিধা হয়। এর প্রমাণস্বরূপ আমি কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি_ আমি নিশ্চিত এগুলো পড়লে অপনারা যারপরনাই বিস্মিত হবেন। এগুলো মনগড়া নয়। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে মুলতবি প্রসত্মাব আলোচনাকালে এসব মনত্মব্য করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সংসদে মুলতবি প্রসত্মাব তোলেন_ "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুমনত্ম ছাত্রদের ওপর নিশুতি রাতে জামায়াত শিবিরের নারকীয় তা-বে নিহত জোবায়েদ চৌধুরী রীমু [বিএনপি নেত্রীর পুত্র] হত্যাকা- এবং শতাধিক আহত ছাত্রদের আর্তনাদ বিষয়ক আলোচনা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাসত্মি দেয়ার উদ্দেশ্যে আইনগত ব্যবস্থা অবলম্বনের স্বার্থে অবিলম্বে সংসদ মুলতবি করা হোক।" সংসদ মুলতবি করা হয়। এরপর ৩২ জন সংসদ সদস্য এ প্রসত্মাবের ওপর আলোচনা করেন। এর মধ্যে ১৭ জন বিএনপির। ১০ জন আওয়ামী লীগের। বাকিরা আনি-দুয়ানি দলের। এবার বিএনপির কয়েকজন সংসদ সদসের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিচ্ছি_ ১। "আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।...রাজাকাররা জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় আমার ৬২ বছরের পিতাকে বেত্রাঘাত করেছিল...আজকেও সেই রাজাকাররা, সেই আলবদররা এখনও বাংলাদেশে বেঁচে আছে, তাদের সনত্মানরা তাদের কাছ থেকে শিৰা গ্রহণ করে আমার সনত্মানদেরকে গলা কাটে আর রগ কাটে।...তাই আজ এই রাজাকার আলবদর আর জামায়াত শিবিরের বিরম্নদ্ধে সরকারকে কঠোর এবং কঠিন সিদ্ধানত্ম নিতে হবে।" আবদুল আলী মৃধা [নরসিংদী-৫] ২।"...দেশের প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করছে যে, জনগণের বিরম্নদ্ধে যারা রাজনীতি করে, যারা হানাদার বাহিনীর সাথী হয়ে এদেশের মা-বোনদেরকে নির্যাতন করেছে, তাদেরকে আইনগতভাবে রেহাই দেয়া সত্যিকারভাবে আজকে জাতির জন্য একটি কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমি আশা করব অতীতের ভুলকে শুধরিয়ে আজকে যারা ধর্মকে নিয়ে রাজনীতি করতে চায়, আজকে যারা এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে, এ জামায়াত শিবিরের রাজনীতিকে চিরতরে নিষিদ্ধ করার জন্য আমি আপনাদের কাছে দাবি জানাব।" মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, বীরবিক্রম (ভোলা-৩) ৩। "...আজকে আমরা সারা বাংলাদেশে দেখছি এ জামায়াত শিবির জঘন্য ভাষায় ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রানত্মির মাঝে ফেলে দিয়ে যে সন্ত্রাসের রাজনীতি, মিথ্যার বেসাতির রাজনীতি তারা সারা বাংলাদেশে কায়েম করেছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন যে, গত নির্বাচনের সময় তাঁরা মেয়েলোকদের ভোট দিলে বউ তালাক হয়ে যাবে এ ফতোয়া দিয়ে বেড়িয়েছে যে মেয়েলোকের পিছনে রাজনীতি করলে এ দেশের প্রতিটি মানুষ নরকে চলে যাবে, দোজখে চলে যাবে। এমনিভাবে তারা ইসলামকে অপব্যাখ্যা করে। ইসলামের অসত্য ব্যাখ্যা করে তারা এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষদের বিপথগামী করে ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি করছে। ...ওদের রাজনীতি যদি দমন না করা যায় তা'হলে আগামী দিনে এই গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের রাজনীতি এদেশে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।" মশিউর রহমান (ঝিনাইদহ -২) ৪। "গোলাম আযমের বংশধররা এ দেশে কী করতে পারে আমরা অনেকেই ভুলে গিয়েছিলাম, এই কিছুদিন আগেও যখন বলেছিলাম এই গোলাম আযমকে বাংলাদেশে রাখলে বাংলাদেশের পরিণতি খারাপ হবে, আজকে সেটা প্রমাণিত হতে যাচ্ছে... আজকে তাই এই হাউস থেকে এই দিক থেকে, ঐ দিক থেকে প্রসত্মাব এসেছে, জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে। এরপরেও কি মাননীয় স্পীকার, আমরা এই সংসদে জামায়াত শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রসত্মাব নিতে পারব না?" শাজাহান সিরাজ (টাঙ্গাইল-৪) ৫। "এদের অস্ত্রের উৎস কোথায় এসব জাতির সামনে আসা দরকার, না হলে দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে যাবে এবং ভবিষ্যতে এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব তাদের দ্বারা বিপন্ন হতে পারে।" আলমগীর কবির (নওগাঁ-৬) [বিসত্মারিত তথ্য এএসএম সামশুল আরেফিন সম্পাদিত 'জামায়াতে ইসলাম নিষিদ্ধ হোক'] একই কা- ঘটিয়েছে জামায়াত কিছুদিন আগে। এখন তারা এ বিষয়ে শুধু নিশ্চুপ নয়, নিজামী, মুজাহিদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবার জন্য মাঠে নেমেছে। একদশক আগে যারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন, একদশক পর তারা তাদের সঙ্গে সরকার গড়লেন। তা'হলে এসব রাজনীতিবিদের চরিত্রের দৃঢ়তা সম্পর্কে সন্দেহ থেকে যায়। বিএনপি যা বলেছিল তাই যদি করত এবং এখনও তা মনে করত। তা হলে বলা যেত রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কমিটমেন্ট আছে। এখন দেখা যাচ্ছে তা নেই। একদশক আগে তারা যা বলেছিল আজ তাদের স্থান এর বিপরীত। অর্থাৎ এরা নিজেদের সুবিধার জন্য যা খুশি বলতে পারে, করতে পারে, মিথ্যা বলতে পারে। যেমন বলেছিলেন বেগম জিয়া যে, শানত্মিচুক্তির পর ফেনী পর্যনত্ম ভারতের অনত্মর্গত হয়ে যাবে বা আওয়ামী লীগ ৰমতায় এলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। একজন মহিলা কীভাবে সত্য নয় এমন কথা বলেন? একদিক থেকে ভালই হয়েছে। বিএনপির বর্তমান চরিত্র স্পষ্ট হয়ে গেছে। এরা জামায়াতের একটি ফ্রন্ট। শুধু তাই নয়, এটি চরম সুবিধাবাদী একটি দল যাদের কাছে আদর্শ, কমিটমেন্ট থেকে ব্যক্তি বড়। সুতরাং দেশে যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের জন্য তারা অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে তা হলে অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়ার জন্য তাদেরও প্রতিরোধ করতে হবে। আফসোস এ কারণে যে, যারা আওয়ামী লীগের বিরোধিতার জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছিল আজ বিএনপির নেতারা তাদের কাঁধে যুদ্ধাপরাধের দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নষ্ট করছে। বিএনপি যুদ্ধাপরাধের দায় নেবে কিনা এটি চিরচেনা মওদুদ আহমদ, সাকাচৌর হাতে ছেড়ে না দিয়ে তৃণমূলের যুবকদের ঠিক করা উচিত তাদের ভবিষ্যত কী হবে? (দৈনিক জনকণ্ঠ থেকে) নিজামীরা একাত্তরে যা যা করেছেন...
রাজীব আহাম্মদ।। জামায়াতের কেউ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, পৃথিবীর কারও সাধ্য নেই এটি প্রমাণ করার। জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী গত শুক্রবার জেলা জামায়াতের আমিরদের সমাবেশে এমন দাবি করেন। ওই সমাবেশে তিনি দাবি করেন, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলেও মানবতাবিরোধী অপরাধ (খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ) করেনি। যদিও মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজামী নিজেই মুক্তিযোদ্ধাদের 'ভারতের দালাল', 'বিচ্ছিন্নতাবাদী', 'কাফের' আখ্যা দিয়ে 'খতম' করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় নিজামীর উদ্ধৃতি দিয়ে এসব আহ্বানের খবর প্রকাশিত হয়। নিজামী নিজেও তার লেখায় পাকিস্তান রক্ষায় 'আক্রমণাত্মক' হতে ঘাতক আল-বদর বাহিনীর প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই রকম আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। মাওলানা নিজামী ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর দৈনিক সংগ্রামে 'বদর দিবস, পাকিস্তান ও আলবদর' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয়তে লেখেন, '...দুর্ভাগ্যবশত পাকিস্তানের কিছু মুনাফিক (মুক্তিযোদ্ধা) তাদের (ভারতের) পক্ষ অবলম্বন করে ভেতর থেকে আমাদের দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের মোকাবিলা করে তাদের সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করেই পাকিস্তানের আদর্শ ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে; শুধু পাকিস্তান রক্ষার আত্মরক্ষামূলক প্রচেষ্টা চালিয়েই এ পাকিস্তানকে রক্ষা করা যাবে না।' তিনি এ লেখার মাধ্যমে বদর বাহিনীকে আক্রমণাত্মক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। 'আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনার সহযোগিতায় এ দেশের ইসলামপ্রিয় তরুণ সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আলবদর বাহিনী গঠন করেছে।' তিনি তার লেখায় মুক্তিযোদ্ধাদের মুনাফিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ছিলেন। ওই সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের 'দেশদ্রোহী', 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে খতমের আহ্বান জানান। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী, জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অনেক নেতা একই রকমের বক্তব্য দেন। মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যার নির্দেশ দেন। অনেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে আলবদর, রাজাকার, আলশামস বাহিনীতে যোগ দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ আছে। পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলিল (ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান) অনুযায়ী এবং ওই সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জামায়াতের বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, চার নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, মকবুল আহমাদ, মাওলানা আবদুস সুবহান, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, তিন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা ও এটিএম আজহারুল ইসলাম, নির্বাহী পরিষদের অপর দুই সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহেদ ও মীর কাসেম আলী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠনে সহায়তা করেন। এসব বাহিনীর নেতৃত্বও দেন তারা। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরের ১৪ জুন জামালপুর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় নিজামী বলেছিলেন, ইসলাম রক্ষায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। এ জন্য তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের দলীয় মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যায় নিজামীকে বদর বাহিনীর প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয় (মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা)। পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় নিজামী বলেছিলেন, '...ইসলামী ছাত্রসংঘের কর্মীরা দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ' (দৈনিক সংগ্রাম, ৮ সেপ্টেম্বর)। আজাদী দিবস উপলক্ষে ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে নিজামী বলেছিলেন, 'পাকিস্তান কোনো ভূখণ্ডের নাম নয়, আদর্শের নাম। ইসলামী আদর্শই পাকিস্তান সৃষ্টি করেছে এবং এই আদর্শই পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম।' তিনি আরও বলেছিলেন, 'ইসলামপ্রিয় ছাত্র সমাজ বেঁচে থাকতে পাকিস্তানের অস্তিত্ব টিকে থাকবে' (১৫ আগস্ট ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)। জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন আলবদর বাহিনীর অন্যতম সংগঠক। ১২ আগস্ট ১৯৭১ দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। '৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরে ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী গড়ে তুলতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। ২৫ অক্টোবর ইসলামী ছাত্রসংঘের এক সম্মেলনে মুজাহিদ 'পাকিস্তানের ছাত্র-জনতাকে দুষ্কৃতকারী (মুক্তিযোদ্ধা) খতম করার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান' (২৬ অক্টোবর ১৯৭১, দৈনিক সংগ্রাম)। ১৯৭১ সালের বদর দিবস উপলক্ষে ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘ আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মুজাহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছিলেন, 'বিভিন্ন পর্যায়ে কিছু কিছু লোক এখনও পাকিস্তানের আদর্শবিরোধী কাজ করছে। জনগণ তাদের সম্পর্কে সচেতন।' তিনি এদের খতমের আহ্বান জানান (৮ নভেম্বর ১৯৭১ দৈনিক আজাদ)। তিনি ওই সমাবেশে যেসব দোকানে 'ভারতমনা' লেখকের বই পাওয়া যাবে সেগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মালেক মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মালেক মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রীর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল মন্ত্রী হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। প্রায় দুই বছর সাজাও ভোগ করেন তিনি। দালাল আইন বাতিল হলে ১৯৭৪ সালে তিনি মুক্তি পান। ১৯৭১ সালের মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী সড়কের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন জামায়াতকর্মী নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করেন ইউসুফ। তখন এ সংবাদ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ছাপা হয়। ২৮ নভেম্বর করাচিতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'রাজাকাররা আমাদের বীর সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় হামলার মোকাবিলা করছে।' তিনি রাজাকারদের হাতে আরও আধুনিক অস্ত্র দেওয়ার দাবি জানান। জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে স্বাধীনতার বিরোধিতা করার অভিযোগ। মকবুল আহমাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় শান্তি কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মকবুল আহমাদ '৭১ সালের ১০ আগস্ট রেডিও পাকিস্তান চট্টগ্রামের ডিউটি অফিসার ইনচার্জ ফজলুল হককে লেখা এক চিঠিতে ফেনীর তাকিয়াবাড়ির মাওলানা সৈয়দ ওয়ায়েজউদ্দিনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। এ জন্য তিনি ফেনী শহর রাজাকার কমান্ডার হানিফ ও উপদেষ্টা মাওলানা মোস্তফাকে চট্টগ্রামে পাঠান। পরে ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে ওয়ায়েজউদ্দিনকে একটি জিপে করে তুলে নিয়ে যায় রাজাকাররা। এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মকবুল আহমাদের হাতে লেখা সেই চিঠিটি বাংলায় অনুবাদ করে বিলি করে। (তথ্য সূত্র : ফেনী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ও বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সংবাদ)। জামায়াতের আরেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বাধীনতার প্রবল বিরোধিতা করেন। মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন বলেও স্থানীয় লোকজন ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ অভিযোগ এনেছেন। যা বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জামায়াতের অপর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনা জেলা শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন। 'একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায়' ও 'মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান' বই দুটিতে এর উল্লেখ রয়েছে। মাওলানা সুবহানের সেই সময়কার কোনো বক্তব্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া না গেলেও তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি আশরাফ আলীর তত্ত্বাবধানে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনী গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক সংগ্রামের একটি প্রতিবেদনে কামারুজ্জামানকে ময়মনসিংহ জেলা আলবদর বাহিনীর প্রধান সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রামের খবরে বলা হয়, জেলা ছাত্রসংঘের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী জামালপুরে মোট ৫শ' দুষ্কৃতকারীকে (নিরীহ গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা) হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে চার ভারতীয় চরকে আটক করেছে। ৭০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে আটক করার খবরও প্রকাশ করা হয়। অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম আলবদর বাহিনীর রাজশাহী জেলা শাখার প্রধান ছিলেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, এ এস এম সামছুল আরেফিন পৃ-৪৩০)। ১৯৭১ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুরের যে সভায় মুজাহিদ আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন, সেই সভায় সভাপতিত্ব করেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন দলিল 'ফোর্টনাইটলি সিক্রেট রিপোর্ট অন দ্য সিচুয়েশন ইন ইস্ট পাকিস্তান'-এর অক্টোবরের দ্বিতীয় ভাগের প্রতিবেদনে (১৩ নভেম্বর ১৯৭১ স্বরাষ্ট্র সচিব স্বাক্ষরিত) এ সভার কথা উল্লেখ আছে। আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪৩০)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এর উল্লেখ রয়েছে। নির্বাহী পরিষদের সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের '৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বদর বাহিনীর জেলাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন (মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান, পৃ-৪২৯)। ২ আগস্ট চট্টগ্রামের মুসলিম হলে এক সমাবেশে তিনি বলেন, 'ভারতের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।' (৩ আগস্ট দৈনিক সংগ্রাম) নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য মীর কাসেম আলী মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে ঢাকা শহর ছাত্রসংঘের আয়োজিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, '১৪ বছর পূর্বে কাফেররা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) উপর যেভাবে আক্রমণ চালিয়ে ছিল হিন্দুস্তান (ভারত) ও তার চররা (মুক্তিযোদ্ধারা) বর্তমানে পাকিস্তানের ওপর সেভাবে হামলা চালাচ্ছে। আমাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত থাকতে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে ৭ কোটি মানুষকে হিন্দুস্তানের গোলামে পরিণত হতে দিব না।' (দৈনিক আজাদ ৮ নভেম্বর ১৯৭১)। (দৈনিক সমকাল, ১৮ এপ্রিল ২০১০) |