শিরোনাম ।।আরো সংবাদ।। সংখ্যা ২ সংখ্যা ৩ সংখ্যা ৪ সংখ্যা ৬ সংখ্যা ১৭ সংখ্যা ২৪ সংখ্যা ২৫ সংখ্যা ২৬ |
রাজাকারের ফাঁসি চাই রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে বাংলাদেশে চলমান তারুণ্যের উত্থানে নিউইয়র্কও সামিল হয়েছে। কবি শিল্পী সাহিত্যির সাংবাদিক রাজনীতিবিদ সবাই যে যেখানে আছেন সেখান থেকে দাবী তুলছেন। জ্যাকসন হাইটস-এ ছুটির দিনগুলোতে সমবেত হচ্ছেন, গান কবিতা স্লোগানে মুখরিত করছেন। প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী তাহমিনা শহীদ গেয়েছেন "রাজাকারের ফাঁসি চাই।" গানটি ইতিমধ্যে ইউটিউবেও পাওয়াচ্ছে। আমাদের পাঠক-গ্রহকদের উদ্দেশ্যে এখানেও তুলে দেয়া হলো। গানের কথা ও সুর কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ'র।'জনস্বার্থ কোনটা? জামায়াতের স্বার্থ নাকি ৪১ বছর ধরে জাতির সূর্য সন্তানের বিচার দাবির স্বার্থ!'-শাহরিয়ার কবির
শাহরিয়ার কবির। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বরণ্যে সাংবাদিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে সংঘটিত মানব ইতিহাসের অন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে গত চারদশকে নানাভাবে সংগ্রাম করছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের দীর্ঘ আন্দোলন বাস্তবে রূপ পাবার পথে হাঁটতে শুরু করে। কিন্তু কন্টকময় সেই পথে ষড়যন্ত্রের বীজ বিছিয়ে রাখা বিশ্বমানবতার শত্রুরা আজো সক্রিয়। যে কারণে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে নানাভাবে বিঘœ তৈরির কাজ চলছেই। সাম্প্রতিক আলোচিত বিচারপতির স্কাইপি কথোপকথন এবং বিচারের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাপ্তাহিক মুখোমুখি হয় বিশিষ্ট এই যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞের। ইতোমধ্যে তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিয়েছেন। নানাভাবে সহযোগিতা করছেন ট্রাইব্যুনালকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাহরাম খান সাপ্তাহিক : মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আন্তরিকতার অভাব না থাকলেও অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যার বিষয়ে আপনাদের অনেক আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। বর্তমান সময়ে এসে কি সেই আশঙ্কাই প্রতিফলিত হচ্ছে? শাহরিয়ার কবির : দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর একটি অপরাধের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিকেই এর একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ গত চল্লিশ বছরে বেশিরভাগ সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অভিযুক্তদের সহযোগিতা করেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল নষ্ট করেছে। এমনকি বধ্যভূমি পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যে, চল্লিশ বছর পর সাক্ষী প্রমাণগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ করা। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যে আইনে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, এই আইনে পূর্বে কোনো সময় আমাদের দেশে বিচারকাজ হয়নি। এটা কিন্তু প্রচলিত ফৌজদারি আইন নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটা আইন। এখানে পৃথিবী বিখ্যাত যুদ্ধাপরাধ বিচারের নূরেমবার্গ, টোকিও, ম্যানিলা ইত্যাদি দেশে যেসব আইন- নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে সেগুলো থেকেও দিকনির্দেশনা নেয়া হয়েছে। ফলে প্রথমদিকে আমাদের আইনজীবীরা কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে দুই বছরের অভিজ্ঞতায় তারা অনেক বিষয় কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। তারপরও বলব ট্রাইব্যুনালে আইনজীবীর সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। আরও দক্ষতাসম্পন্ন আইনজীবী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। অনেক রকমের এখনো ঘাটতি আছে। সাপ্তাহিক : কি ধরনের ঘাটতি আপনি অনুভব করছেন.... শাহরিয়ার কবির : যেমন ধরুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। স্কাইপি কথোপকথন যে ফাঁস হলো এটাই তো প্রমাণ করে যে ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা কত ঝুঁকিপূর্ণ। বিচার সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকা দরকার। বিচারক, আইনজীবী, কর্মকর্তা সবার ক্ষেত্রেই এটা নিশ্চিত করতে হবে। স্কাইপির বিষয়টাকেও তো একটা আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা যায়। এটা রীতিমতো সাইবার ক্রাইম। পর্যাপ্ত গোয়েন্দা কার্যক্রম থাকলেও এ সমস্যাটা হতো না। সাপ্তাহিক : দক্ষ বিচারক বা প্রসিকিউটর নিয়োগের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নাম অনেক আগে থেকেই আলোচিত হয়ে আসছিল। কিন্তু তাদের নিয়োগ করা হচ্ছে না... শাহরিয়ার কবির : বর্তমানে যে আইনে বিচার চলছে এর অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। মুক্তিযুদ্ধের পরপর বুদ্ধিজীবী হত্যার যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় সেই তদন্ত কমিটির সদস্য ছিলেন ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম। গত ৪১ বছর যাবৎ তারা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছেন। ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার অনেক আগে থেকেই তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম আমরা। আমরা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি করেছি ১৯৯২ সালে। গত ২১ বছরে তাদের অনেক সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। আইনমন্ত্রী একবার বললেন বর্তমানে যিনি প্রধান কৌঁসুলি আছেন সেখানে আমিরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তিরা কাজ করবেন কি না সেটা একটা বিষয়। আমরা বলেছি একটা উপদেষ্টা পরিষদ করেন। কারণ সব মামলাই হয়ত আপিল হবে সেখানে তাদের সহযোগিতা নিতে পারবেন। প্রয়োজনে তারা কোর্টে দাঁড়াবেন। সাপ্তাহিক : অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রসিকিউশনে যুক্ত করা হলে কি বিচার কাজ আরও দ্রুততার সঙ্গে চলত বলে আপনার মনে হয়? শাহরিয়ার কবির : অবশ্যই। কারণ এখন যারা প্রসিকিউশনে আছেন তারা ট্রায়াল এরর-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় তারা ঠেকছেন, তারপর শিখছেন। কিন্তু আমাদের তো এমন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ আছেন যারা আগে থেকেই বিষয়গুলো খুব ভালো জানেন। এসব বিষয়ে আমরা বিচার শুরু হওয়ার এক বছর আগেই বলেছি, প্রধানমন্ত্রীকেও তালিকা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী সব কিছু দেখেন না। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করেছে। আইনমন্ত্রী ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়টা ভালো জানেন। সাপ্তাহিক : স্কাইপি নিয়ে বিতর্কে যে বিষয়টা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে সেটা হচ্ছে একজন বিচারপতি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এভাবে কথা বলতে পারেন কি না? শাহরিয়ার কবির : একজন বিচারক তার পরামর্শের ক্ষেত্রে কোনো আইনগত বাধায় আটকা থাকে না। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি বিচার হচ্ছে। বিচারক এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ প্রবাসী জিয়াউদ্দিন সাহেবের সহযোগিতা চেয়েছেন। এতে আমি দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু জিয়াউদ্দিন সাহেব কিছু বিষয়ে জানতে চেয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন। সেই বিষয়গুলো নিজামুল হকের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো উচিত হয়নি বলে মনে করি। তেমনিভাবে যারা বিচারকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ভেঙেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে ট্রাইব্যুনাল সরকারকে বলেছে। আমরা বলেছি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। আমাদের অনেক আইটি বিশেষজ্ঞ আছেন তারা নিশ্চয়ই বিষয়টি আবিষ্কার করতে পারবেন। ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। মাত্র একটা নাকি দুটা ক্যামেরা আছে ট্রাইব্যুনালে। এতবড় জায়গায় মানুষের আসা যাওয়ার কত রাস্তা আছে, সব নজরদারিতে রাখতে হবে। গোয়েন্দা নজরে ঢেকে ফেলতে হবে পুরো ট্রাইব্যুনালকে। রাস্তার পাশে যদি বোমাভর্তি গাড়ি রেখে যাওয়া হয় পুরো বিল্ডিং উড়ে যাবে। আমি আশঙ্কা করছি ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের হামলা হতে পারে। সেই জায়গায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সাপ্তাহিক : এটাকে অনেকে ব্যর্থতা হিসেবে অভিহিত করছেন... শাহরিয়ার কবির : নিঃসন্দেহে এটা নিরাপত্তাজনিত ব্যর্থতা। এ ব্যর্থতা স্বীকার করেই আগামী দিনে আরও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ জোরদার গোয়েন্দা তৎপরতা থাকলে এই ষড়যন্ত্র অবশ্যই ধরা পড়ত। সাপ্তাহিক : আপনি বলছেন ব্যক্তিগত কথোপকথন হ্যাক করা বেআইনি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিচারকের কথোপকথনে কি জনস্বার্থের বিষয়টা জড়িত নয়? শাহরিয়ার কবির : জনস্বার্থ কোনটা? আমাদের আগে সেই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। জামায়াতের স্বার্থ নাকি ৪১ বছর ধরে জাতির সূর্য সন্তানের বিচার দাবির স্বার্থ! এখানে নিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই। পক্ষ দুটোই। যারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তারা। আরেকটা হচ্ছে যারা ২০০৮ সালে বর্তমান সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অঙ্গীকারের সমর্থনে সমর্থন দিয়েছেন। আমি অনেক টকশোতে জনস্বার্থের মাতম করতে দেখছি। কিন্তু জনস্বার্থটা আরও বুঝতে হবে। এখানে ট্রাইব্যুনালপ্রধান দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করে বিচার কাজকে আরও স্বচ্ছ করেছেন। ঠিক তেমনি এ কথোপকথনে জড়িত থাকা জিয়াউদ্দিনের বিষয়টাও দেখতে হবে। কারণ তার সঙ্গে কথা বলা বা পরামর্শ নেয়া মানে ডিকটেক্ট করা নয়। ট্রাইব্যুনালকে সহযোগিতা তো আমরাও করছি। বিচার শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের কাছে থাকা সমস্ত দলিল ডকুমেন্ট দুটি বড় বাক্সে করে ট্রাইব্যুনালকে দিয়েছি। ট্রাইব্যুনালের নানা প্রয়োজনে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে চাপ দিচ্ছি। কিন্তু বিচারক কীভাবে বিচার করবেন সেটা আমরা বলে দিতে পারি না। জিয়াউদ্দিন সাহেব তেমন কিছু কথা বলেছেন। তাই এগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ করে জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে নিজামুল হক সাহেবের যোগাযোগ কে করিয়ে দিয়েছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কীভাবে এ বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এগুলো বিস্তারিত জানতে হবে। সাপ্তাহিক : ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তো আইনিভাবেই নিতে পারতেন। দেশি-বিদেশি যে কাউকে ডাকতে পারতেন.... শাহরিয়ার কবির : আমরা এখনো জানি না ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে জিয়াউদ্দিনের সম্পর্ক কি। এটা আইনমন্ত্রী বা সরকার ভালো বলতে পারবেন। তাই এ বিষয়টা আগে খোলাসা হওয়া দরকার। কারণ ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা জিয়াউদ্দিনের চেয়ে অনেক দক্ষ বলে আমি মনে করি। তারপরও সংশ্লিষ্ট কারও অভিমত একজন বিচারক নিতে পারেন। কিন্তু রায় তো বিচারক নিজে দেবেন। এতে প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সাপ্তাহিক : কিন্তু প্রথম থেকেই বিচার কাজের পর্যালোচনা করা হয়েছিল। তারা কি একটা হাতিয়ার পেয়ে গেল না? শাহরিয়ার কবির : যারা এসব প্রশ্ন তুলছে তাদের ৯৯ ভাগ নির্জলা মিথ্যা। বাকি একভাগের আধাভাগ অর্ধসত্য। এসব মানুষের কোনো ভিত্তি আছে? পৃথিবীর ইতিহাসে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের কারো বিচার কি সেই অপরাধীদের পছন্দ অনুযায়ী হয়েছে? যদি বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো তাহলে যারা যুদ্ধে জড়িত হয়েছিল তাদের তো বিচার করা হতো। সেই বিচার কি এত দেরিতে হতো? এগুলো তো আমাদের বুঝতে হবে। তাই এ বিচার নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রশ্নের কোনো জায়গা নেই। সাপ্তাহিক : পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে কথোপকথন প্রকাশে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। এতে কী জনগণের মধ্যে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে! অনেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথাটিও বলছেনÑ শাহরিয়ার কবির : আমি মনে করি আরও অনেক আগেই রুল জারি করে পত্রিকায় কথোপকথন ছাপানো বন্ধ করা দরকার ছিল। আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা কার প্রত্যাশা দেখব। গুটিকয়েক খুনির নাকি ৩০ লাখ শহীদ পরিবারের তথা গোটা জাতির ৪১ বছরের অপেক্ষার্থীদের। যারা আত্মস্বীকৃত খুনি, ’৭১ সালে জামায়াতিদের মুখপাত্র সংগ্রাম পত্রিকা দেখলেই বুঝা যায় তারা কীভাবে আলবদর বাহিনী তৈরি করেছে। স্বচ্ছতা, মানদণ্ড ইত্যাদির প্রশ্নগুলো হয়। স্বচ্ছতার মানদণ্ড কি? এর কি কোনো সর্বজন স্বীকৃতি কাঠামো আছে যে এভাবে কর, এটা সঠিক। তবে প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচার হিসেবে নূরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালকে অনেকে উদাহরণ মনে করেন। অথচ আমাদের ট্রাইব্যুনালের মান নূরেমবার্গ থেকে অনেক বেশি আপডেটেড। নূরেমবার্গে রায়ের আপিলের সুযোগ ছিল না, আসামি পক্ষের উকিলরা অপ্রাসঙ্গিক বিষয় আনলেই তাদেরকে কঠোরভাবে বাধা দেয়া হতো। এগুলোই সত্য। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ঘেঁটে দেখুন। অথচ আমাদের এখানে আপিলের সুযোগ থাকছে। আসামিদের জামিনের সুযোগ, প্যারেলে জামিনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তারপরও যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশ্য দেখতে হবে। সাপ্তাহিক : আপনি নিজেও সাক্ষী দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা কি? শাহরিয়ার কবির : আমি একজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষী। অথচ আসামি পক্ষ নয়দিন যাবৎ আমাকে যেভাবে জেরা করেছেন তা আমার কাছে শাস্তির মতো মনে হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছতার স্বার্থে কিছু বলেননি। আমি নিজে অনেক সময় বাধা দিয়েছি যে, আমাকে এভাবে জেরা করতে পারেন না। তাই এই বিচারকাজ নিয়ে সচেতনভাবে কথা বলা উচিত বলে মনে করি। কারণ ভবিষ্যতে বিশ্বের কোনো জায়গায় যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হয় তাহলে আমাদের ট্রাইব্যুনালকে অনুসরণ করতে হবে। সাপ্তাহিক : আন্তর্জাতিকভাবে বিচার কাজের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নেতিবাচক প্রচার হওয়ার কথা বলছেন অনেকে... শাহরিয়ার কবির : এটা বিচার শুরু হওয়ার আগে থেকেই জোরেশোরে চলছে। আমি প্রায় সময় বিদেশি বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও ব্যক্তিগতভাবে বলি যে, আমাদের দেশে একটি যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা সবাই বাংলাদেশি। অর্থাৎ যে ত্রিশ লাখ শহীদ আত্মত্যাগ করেছেন তারাও বাংলাদেশি, যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন তারাও বাংলাদেশি। তাদের বিচার করার জন্য আমাদের দেশীয় আইন আছে। সেই আইন অনুযায়ী বিচার হচ্ছে। এখানে বাইরের কোনো দেশের নাক গলানোর সুযোগ নেই। আমরা কম্বোডিয়ার মতো কোনো হাইব্রিড আদালত করিনি। আমাদের দেশীয় আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার করছি। এটা আমাদের গর্বের বিষয়। অনেকে ভুল করে বলেন এটা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এটা আমাদের দেশীয় আদালত। সৌদি আরবে যখন প্রকাশ্যে মাথা কাটা হয়, গুয়েন্তেনামোতে আমেরিকা যখন ক্যামেরা ট্রায়াল করে সেখানে আন্তর্জাতিক বিবেক কাজ করে না! আন্তর্জাতিক বিবেক কাজ করে ৩০ লাখ শহীদের হত্যার বিচারের সময়? অথচ এই বিচারে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনে যেসব সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত উঁচুমানের। বিএনপির মতো দলও বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কথা বলে। যখন জিয়াউর রহমান জেলখানার ভেতরে কর্নেল তাহেরসহ ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারে তখন স্বচ্ছতা কোথায় ছিল? সাপ্তাহিক : বিচার কাজের সময় কি একটু বেশি লাগছে? শাহরিয়ার কবির : খুব বেশি সময় লাগছে বলা যাবে না। কারণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গিয়েই আসামিদের অনেক বেশি সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তবে সরকার পক্ষের কাজের গাফিলতির কারণে কিছু সময় ক্ষেপণ হয়েছে। প্রথম থেকে আমাদের দাবি অনুযায়ী দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত রসদ যোগান দিলে আরও তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হতো। তারপরও যাদের বিরুদ্ধে বিচার চলছে তাদেরটা আগামী ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার মতো বলে মনে হয়। সাপ্তাহিক : বিজয়ের মাসে জামায়াত-শিবিরীয় তাণ্ডবে দেশবাসী হতবাক। পুলিশও অনেকটা পিছু হটেছে... শাহরিয়ার কবির : এখানে দুটো বিষয় আছে। একটা হলো জামায়াতের লোক পুলিশেও আছে। অন্যদিকে জামায়াত কিছু লাশ চেয়েছিল। যাতে তারা জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে বোঝাতে পারে যে, দেখ আমাদের সবদিক দিয়ে নির্যাতন করছে। এদিক দিয়ে পুলিশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। বিচার শুরুর আগে থেকেই বলে আসছিলাম জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে। দলের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হবেন, বিচারের সম্মুখীন হবেন আর তাদের দল বসে থাকবে বিষয়টা তো এরকম নয়। নাৎসি পার্টি করা এখনও নিষেধ। তেমনিভাবে নেতাদের সঙ্গে সংগঠনও নিষিদ্ধ করতে হবে। না হয় যেসব হামলা করেছে তার চেয়েও ভয়ঙ্কর হামলা করতে পারে জামায়াত। এই বিষয়টা মাথায় নিয়ে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। সাপ্তাহিক : জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে সচেতন মহলেই ভিন্ন মত দেখা যায়... শাহরিয়ার কবির : আমেরিকা বলেছে জামায়াত মডারেট ইসলামিক দল। তাদের নিষিদ্ধ করলে জঙ্গিপনা বাড়বে। তখন তাদের ওপর নজরদারি রাখা কঠিন হবে। এসব কথা শুনে আমাদের অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। গত অক্টোবর মাসে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমার দীর্ঘ কথা হয়েছে। আমি তাদের বলেছি, জামায়াতের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা আমরা যতটুকু জানি তার চেয়ে বেশি জানো তোমরা। তাদের আস্তিনের নিচে আরও একশোর বেশি জঙ্গি সংগঠন আছে। যাদের এখনও মাঠে নামানো হয়নি। তারা ভবিষ্যতে আরও বিশৃঙ্খলা করবে। তাই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের সংবিধানের ৩৮ ধারা মোতাবেক যদি কোনো দল জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। জামায়াত ’৭১ সালে গণহত্যায় লিপ্ত একটি দল। এরপর আর কি প্রমাণ প্রয়োজন হয় একে নিষিদ্ধ করতে? সাপ্তাহিক : জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আইনগত বিষয়টা যদি বলেন... শাহরিয়ার কবির : সংবিধানের কথা তো বললাম। এটাকেই আইনগতভাবে সবচেয়ে বড়ভাবে উপস্থাপন করা যায়, কারণ সংবিধান আমাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় আইন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে যারা যেসব সংগঠন থেকে অপরাধ করেছে সেইসব সংগঠন এত বড় গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েও বাংলাদেশের মাটিতে জীবিত থাকবে তা কি করে হয়? কিছুদিন আগে একটি সেমিনারে শহীদ ড. আলীম চৌধুরীর কন্যা শম্পা চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন আমার বাবাকে আলবদর বাহিনীর মান্নান বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। মান্নান এখন জীবিত নেই। কিন্তু সংগঠনের বিচার করতে সমস্যা কোথায়? স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের পরিবারকে যদি হত্যাকারীদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন তাহলে হয়ত এক শতাংশ নির্দিষ্ট করে বলতে পারবে খুনিদের কথা বাকি ৯৯ শতাংশ বলবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, জামায়াত, আলবদর, আল শামস, রাজাকারÑ এসব বাহিনীর কথা। তাই এগুলোর বিচার হতে হবে। না হয় শহীদ পরিবার বলতেই পারে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না। সাপ্তাহিক : নাৎসিদের যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল... শাহরিয়ার কবির : নূরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে প্রথমে ২১ জন নাৎসি যুদ্ধাপরাধীর পাশাপাশি নাৎসিদের ৭টি সংগঠনের বিচার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল নাৎসি দলকে। আমরা অদ্ভুত এক নিয়মে কাজ করছি। নেতাদের বিচারের আওতায় নিচ্ছি আর অন্যদিকে সংগঠন তার সর্বশক্তি দিয়ে এই বিচার নস্যাৎ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। মীর কাসেম আলী বিখ্যাত লবি প্রতিষ্ঠান ক্যাসিডি অ্যাসোসিয়েটসকে ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে এসেছে। এই খোঁজ কি সরকার রেখেছে? বিলাতের বিখ্যাত ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান সাঈদীর আইনজীবী হিসেবে বিশ্বব্যাপী নানা কথা বলছেন। উনি কি বিনা টাকায় এসব করছেন? এসব টাকা কোত্থেকে আসল। কীভাবে যাচ্ছে এসব বিষয় জানতে হবে। বিচারকাজ নির্বিঘœ করতে হলে এসবের বিকল্প নেই। জামায়াতের মতো এমন একটি ফ্যাসিস্ট, ঘাতক দলকে কোনোমতেই ছাড় দেয়া যায় না। অনেকে গৃহযুদ্ধের কথা বলছেন। আরে জামায়াত তো ইতোমধ্যে গৃহযুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে। তাদের মাঠে ছেড়ে দিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। সাপ্তাহিক : সংগঠনের বিচার কীভাবে সম্ভব? শাহরিয়ার কবির : সংগঠন হিসেবে যখন জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হবে তখন আদালতে যদি প্রমাণ হয় যে তারা নিষিদ্ধ হওয়ার মতো দল তখন তারা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। সাপ্তাহিক : নিষিদ্ধ হলে লাভ কি হবে? শাহরিয়ার কবির : এখন তারা যেসব গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো পাবে না। নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাদের যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সেগুলো সরকারের অধীনে চলে যাবে। ফলে তাদের অনেক কাজের লিংক বন্ধ হয়ে যাবে। নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে যাবে। যারা আশঙ্কা করছেন যে নিষিদ্ধ করলে কি না কি হয়। আমার কথা হচ্ছে জামায়াতের যেসব জঙ্গি-মিলিটারি উইং আছে সেগুলো নিষিদ্ধ করলেও সক্রিয় হবে, না করলেও হবে। যার কিছুটা রূপ আমরা রাজপথে দেখতেও পাচ্ছি। তাই জামায়াতের মতো দলকে নিষিদ্ধ করতে এত চিন্তার দরকার নেই। সাপ্তাহিক : কিন্তু আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশ বলছে জামায়াত মডারেট ইসলামী দল। এতে কি কোনো প্রভাব পড়বে না? শাহরিয়ার কবির : ১৯৭১ সালের যুদ্ধেও আমেরিকা তাদের প্রভাব রাখতে চেয়েছিল। আমরা আমেরিকার কথা মানলে তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না। এখনও আমেরিকা তার মতো করে রাজনৈতিক স্বার্থে জামায়াতকে মডারেট ইসলামী দল বলছে। তাই আমেরিকার কথা শুনলে আমরা বিচারকাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের বিচার বিভাগ একটি স্বাধীনসত্তায় পৌঁছেছে। প্রতিটি দেশ তার বিচারিক কাজ স্বাধীনভাবে পালন করবে। এখানে কারো হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমেরিকা কি বলছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ আমরা তো ঈর্ষাকাতর হয়ে আবেগের বিচার করছি না। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এমনকি সবচেয়ে বড় সাক্ষী হচ্ছে জামায়াতেরই মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম। সেখানে যুদ্ধকালীন সময়ে তারা কোন কোন বাহিনী গঠন করেছে এবং পাকিস্তানিদের কীভাবে সহযোগিতা করেছে তার বিবরণ আছে। সাপ্তাহিক : ধারণা করা হয় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ জামায়াতের ভোট যাবে আওয়ামী লীগের বিরোধী শিবিরে শাহরিয়ার কবির : কে লাভবান হবেন আর কে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সেই চিন্তা করে যদি আমি আমার আদর্শ, লক্ষ্য, দেশপ্রেম, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেই তাহলে তো হবে না। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে এদের সমর্থন বিএনপির পক্ষে যাবে। কিন্তু বিএনপিকে ঠিক করতে হবে তারা এদের ঠাঁই দিবেন কিনা। কারণ বিএনপিরও তো একটা সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক আছে। তারা যদি জামায়াতের রাজনীতিকে অনুসরণ করে তবে সেটা লাভজনক হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ তৃণমূল নেতাকর্মীরা এসব মেনে নেবেন না। অন্যদিকে জামায়াতের মতো একটি ঘৃণ্য দলের দায়িত্ব কে নিতে চাইবে? আমার মনে হয় বিএনপি যদি তাদের গ্রহণ করে তাহলে তাদেরই বেশি ক্ষতি হবে। জামায়াতের জনসমর্থনই বা কত ভাগ? ওদের মতো টাকা এবং ক্যাডার থাকলে এরকম ৫-৬ ভাগ জনসমর্থন যে কেউ কিনে নিতে পারে। সাপ্তাহিক : বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কীভাবে? শাহরিয়ার কবির : জামায়াতের দায় তো তখন বিএনপিকে নিতে হবে। মানুষের চেতনাগত জায়গায় এটা আঘাত হানবে। ফলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ বিএনপি নেতারা দাবি করেন তাদের বহু নেতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। এটা তো সত্য এবং বিএনপি মুক্তিয্দ্ধুকে ওউন করে। তাই তারা যদি জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রহণ করে তাহলে বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাই স্বাভাবিক, এতে মুক্তিযুদ্ধকে প্রকারান্তরে অস্বীকার করা হবে। যারা বলেন আওয়ামী লীগের ক্ষতি হয়ে যাবে তারা কিসের ভিত্তিতে বলেন আমি বুঝি না। সাপ্তাহিক : বিচার শুরুর আগে থেকেই আপনারা জনগণের কাছে এই বিচারের বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে জোর দিয়েছিলেন। সেই সচেতনতা কি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন? শাহরিয়ার কবির : অনেক বেশি মানুষ এখন এই বিষয়ে সচেতন। এইদিক থেকে অনেক বড় অর্জন হয়েছে বলে আমি মনে করি। গ্রামের একটি রেল স্টেশন থেকে শুরু করে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে, ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বাংলাদেশিরা যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজের জন্য জমায়েত হচ্ছে সেসব কার্যক্রম সেটাই প্রমাণ করে। দেশের অনেক জায়গার সমাবেশে আমাকে ডাকে। কোনটা রেখে কোনটাতে যাই। মানুষের এই যে জেগে ওঠা এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। এখন দরকার সরকারের পক্ষ থেকে এর একটি সাংগঠনিক রূপ দেয়া। যেমনÑ একজন গ্রামের মানুষ একটি সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে পকেটের টাকা খরচ করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু এখানে যদি আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টির মতো দলগুলো এগিয়ে আসে তাহলে সেটা সম্ভব। জামায়াতের লোকেরা এসব কাজে শত শত কোটি টাকা খরচ করছে। অথচ আমাদের সাধারণ নাগরিকের যারা আন্তরিকতার সঙ্গে নিজেদের উদ্যোগে আন্দোলন-প্রতিবাদ করছে তাদের সঙ্গে সরকার ন্যূনতম যোগাযোগ রাখছে কিনা সন্দেহ আছে। সাপ্তাহিক : এত সমর্থনের পরও কি হরতালের দরকার ছিল? শাহরিয়ার কবির : হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে আমি অসমর্থন করি না। কিন্তু এটা হচ্ছে আন্দোলনের শেষ অস্ত্র। আমি জানি না হরতাল পালনের জন্য যেসব পূর্ব কার্যক্রম-প্রস্তুতি তথা জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজগুলো ঠিকমতো হয়েছে কিনা। তবে মূল বিষয় দেখতে হবে, যে যুক্তিতে হরতাল আহ্বান করা হয়েছে সেটি সমর্থনযোগ্য কিনা। আমি মনে করি বামদলগুলো যে কারণে হরতাল ডেকেছে তা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। একই সঙ্গে ইসলামী দলগুলো যে হরতাল ডেকেছে সেখানেও যদি তারা মানুষকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তাদের যুক্তি অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য তাহলে তাদের হরতালকেও অসমর্থন করা যায় না। তবে হরতালের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো নিয়ে আমাদের সচেতন থাকা প্রয়োজন। কারণ ওইদিন দেখলাম তৈরি পোশাক শিল্পে অর্ডারের পরিমাণ কমছে আগামী দিনে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কার কারণে। আমি মনে করি না হরতালের ফলোআপ হরতাল হতে হবে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম জীবিত অবস্থায় দেড় যুগে আমরা মাত্র দুটি হরতাল দিয়েছি। তাছাড়া ২০০৮ সালে মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের পক্ষে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ যখন তাদের ম্যান্ডেট দিয়েছে তখন নতুন করে সমর্থন দেখার দরকার নেই। দরকার এ জনমতকে সাংগঠনিকভাবে কাজে লাগানো এবং বিচারকাজ দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা। ।।গোলাম মোর্তজা সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক'-এর সৌজন্যে।। |
Contact Us