|
আড্ডা-স্মৃতি
|
|
কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ'র সাথে আড্ডা
মাসুদুল হাসান রনি, হাসানআল আব্দুল্লাহ, নাজনীন সীমন
মাসুদুল হাসান রনি
কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ ভাই, এক সময়ে তিনি দু'হাতে ছড়া লিখেছেন শিশু কিশোরদের জন্য । সেই সময়টা আশির দশকের শেষ এবং নব্বই দশকের শুরু। দৈনিক পত্রিকার শিশুকিশোরদের পাতায় নিয়মিতই তার লেখা প্রকাশিত হত। তাঁর লেখার সাথে আমার পরিচয় ঘটে সম্ভবত ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে।
একসময় এই তরুন ছড়াকারের সাথে আমার পরিচয়ও ঘটে দৈনিক সংবাদের খেলাঘর পাতার আয়োজনে নিয়মিত সাহিত্য সভায় । গোটা নব্বই দশক জুড়ে আমরা ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। তাই দেখা সাক্ষাত তেমন একটা আর হয়ে উঠেনি।
পরে, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে দেশ ছেড়ে যান সুদুর আমেরিকায়।
এই আমেরিকায় প্রবাস জীবনেও তাঁর লেখালেখি থেমে যায়নি। বরং গতি পেয়েছে বেশী। দুঃখের বিষয় হল তিনি শিশু কিশোরদের জন্য লেখা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন। মনোনিবেশ করেছেন কাব্য চর্চায়। বাংলা কবিতায় তিনি বেশ কিছু অসাধারণ কাজও করেছেন । মাইকেল মধুসূদনের পর বাংলা সাহিত্যে উদ্ভাবন করেছেন ‘স্বতন্ত্র সনেট’ ধারার। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই একটি কাজই তাঁকে বাংলা কাব্য জগতে দীর্ঘকালের স্থায়িত্ব এনে দিবে।
প্রবাসে নানান ব্যস্ততার মাঝেও তিনি দীর্ঘদিন যাবত সম্পাদনা করছেন বাই-লিংগুয়াল কবিতা পত্র "শব্দগুচ্ছ"। যা ইতোমধ্যে সিরিয়াস পাঠকদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে। শুধু কি বাংলা ভাষা ভাষীদের মাঝে? তা কিন্তু নয়। এই "শব্দগুচ্ছ" আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক কবিমহলেও বেশ প্রশংসা পেয়ে আসছে।
আমাদের হাসান ভাই'র সাথে মাঝখানে আমার কোন যোগাযোগ ছিল না। মাঝে মাঝে তাঁর কবিতা পড়তাম। কিন্তু ২০০৮ সালে এক আড্ডায় হঠাৎ একদিন আমার সাংবাদিক বন্ধু দীপু শিকদার বলছিলেন, কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ বইমেলার জন্য দেশে এসেছেন।
শুনেই আমার মনে পড়ে যায় অনেক কথা। আগ্রহ নিয়ে তাকে জিগ্যেস করি, আপনি কি তাঁকে চেনেন?
দীপু ভাই কিছু বলেন না। শুধুই হাসেন।
আমি আবারো জিগ্যেস করি, আপনার কাছে তাঁর নাম্বার আছে?
দীপু ভাই কিছু না বলে তাঁর ফোন থেকেই হাসানভাইকে ফোন করে আমাকে ধরিয়ে দেন।
আমি কথা বলি।
হাসান ভাই প্রথমে রনি বলায় চিনতে পারেননি। যখনি আমার পুরো নাম বলেছি তিনি সাথে সাথে চিনে ফেলেন।
তারপর আমি এই কথা সেই কথা বলে পরের দিন দেখা করি বাংলা একাডেমির বহেরাতলার লিটিল ম্যাগ চত্বরে। বিদেশ থাকায় হাসান ভাই'র চুলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। একমাথা ঝাঁকড়া চুল। ঠোঁটের কোনে লেগে আছে সেই চিরচেনা দিলখোলা প্রাণবন্ত হাসি।
তারপর থেকে প্রতি বছর নিয়মিত ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় হাসান ভাইর সাথে আমার দেখা হয়ে আসছে। আমাদের সম্পর্ক আগের চেয়ে এখন অনেক বেশী জোরালো। অনেক বেশী যোগাযোগ হয় ফেসবুকের কল্যাণে।
হাসান ভাইর স্ত্রীও একজন স্বনামধন্য কবি, নাজনীন সীমন। তিনি অসাধারন কিছু গল্প লিখেছেন, কবিতাতো বটেই। হাসান ভাইর কারণে তিনি আমার ভাবী। আবার বন্ধু দীপু ভাইর দিক দিয়ে তিনি আমার বড় আপা। আমার সুবিধা মতন আমি কখনো আপা, কখনো ভাবী ডাকি। আমার ডাবল দাবী, ডাবল আত্মীয়তা।
এইবার আমেরিকা যাব যখন ভাবছিলাম, তখন একদিন ফেসবুকে হাসান ভাইর কাছ থেকে ফোন নাম্বার চেয়ে রাখি। আমেরিকা যাব আর হাসান ভাই, আপা-ভাবীর সাথে একবার দেখা করব না—এইটা কি করে হয়?
আমেরিকা যাবার পর নিজস্ব কিছু কাজ থাকায় যোগাযোগ একটু দেরি করে করি। এ নিয়েও হাসান ভাই মন খারাপ করেন।
তারপর একদিন হাসান ভাইকে বলি, কাল অবশ্যই আপনাদের বাসায় যেতে চাই।
পরের দিন হাসান ভাই শত ব্যস্ততার মাঝেও কুলিজ এভিনিউ থেকে আমাকে নিয়ে জ্যামাইকা ঘুরিয়ে দেখান। তারপর তার উডহ্যাভেনের বাসায় নিয়ে যান।
সেইদিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাসান ভাইর বাড়িতে চমৎকার সময় কাটিয়েছিলাম। অনেক আড্ডা, অনেক কথা হয়েছিল আমাদের। সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি কিছুই বাদ যায়নি। আড্ডা দিতে দিতে রাত অনেক হয়ে যায়। কথা বলতে বলতে কত কিছু যে খেয়েছি তা আর এখন মনে নেই।
সব শেষে সীমন আপার হাতের রান্না করা চমৎকার সব খাবার খেয়ে আনন্দের ঢেঁকুর তুলে আমি ফিরে আসি কুলিজ এভিনিউর সুমনের বাসায়। অবশ্যই মাঝরাতে হাসান ভাইকে কষ্ট দিয়ে তাঁর গাড়িতে চড়ে।
অনেকদিন মনে থাকবে এই রাতটির কথা।
|
|
|
|