NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা:

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
  • একজন সোনার মানুষ দেখেছি
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা
  • রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ
  • চীৎকার সংস্কৃতি
  • ফালতু চীৎকার
  • পুরানো ক্ষতে খোঁচার যন্ত্রণা
  • নিমতলীর নরককুণ্ড বাংলাদেশের নিয়তী
  • কে বাঁচাবে বাংলাদেশ?
  • আবার বুঝি জাগছে বাঙালী
  • ভূতুড়ে রাজনীতি তাড়িয়ে দিন
  • নিউইয়র্কে সেদিন সন্ধ্যায় যা ঘটেছিল
  • সাবধান বাঙালী! এখন যুদ্ধাবস্থা
  • রক্ষীবাহিনীর জুজুর ভয়
  • সামাজিক ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সন্ধানে
  • এক দল অমানুষ ও প্রেতাত্মার গল্প
  • আমি লীগের খপ্পরে আওয়ামী লীগ
  • ওরা রাতে দেখে, দিনে দেখেনা
  • জেগে ঘুমিয়ে দেখা
  • মুক্তচিন্তা


    কিসের এতো কথা


    বেলাল বেগ

    বন্ধু! একবার দাঁড়াও নিজের মুখোমুখি


    দৈনিক কালের কন্ঠে ‘আবার জাগছে কি বাঙালী’ শিরোনামে আমার লেখাটি পড়ে অনেকে ইমেলে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জনৈক বেনামি পাঠক আমাকে ‘বেলাল ভাই’ বলে সম্বোধন করে দাবী করেছেন তিনি আমার একজন প্রাক্তন সহকর্মী। তিনি যদি আমার প্রাক্তন সহকর্মীই হবেন, তাহলে পরিচয় কেন উহ্য রাখলেন?
    চিঠিতে তিনি আমাকে আমার লেখাটির জন্য সবিনয়ে এক চোট নিয়েছেন। তিনি আমাকে আওয়ামি লীগের একজন ৪র্থ স্তরের কর্মীর সংগে তুলনা ছাড়াও অভিযোগ করেছেন আমার ভাষার শালীনতা ও লেখাটিতে অনুস্থিত বিচার-বিশ্লেষণের ব্যাপারে। শেষ পর্যন্ত আমি যেন আমার জাত ভুলে না যাই, সে সম্মন্ধে সাবধানবাণী উচ্চারণ করে তিনি ক্ষান্ত হয়েছেন।
    বুঝা গেল ভদ্রলোক খুব ক্ষ্যাপেছেন কিন্তু পরিচয় গোপন করায় বুঝা গেল ‘ডাল মে কুচ কালা হায়’ এবং নিজের মত বলার সৎ সাহস নেই। আমিও তাঁকে জবাবে জানিয়েছি আমার লেখা তাঁকে ক্ষিপ্ত করায় আমি নিশ্চিত হয়েছি যে লেখাটি সার্থক হয়েছে।
    পাঠকের স্মরণার্থে লেখাটির সারমর্ম এরকম- বর্তমান সরকার সমস্ত বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করে বর্তমানে একাত্তরের ঘাতক-দালাল উচ্ছেদ করার অভিযানে নামায় প্রমানিত হলো যে সরকার অত্যন্ত সাহসী ও শক্তিশালী। এর অর্থ সরকারের পেছনে রয়েছে জনসমর্থনের জোয়ার। সরকার বিরোধীদের শত বাধা-বিপত্তির মধ্যেও জাতীয় সংসদ কার্যকর রেখে সরকারের জবাবদিহিতা প্রকাশ্য রাখছে। এতে জনসমর্থন আরো বাড়বে। সরকার ও জনগনের এই যোগসূত্র ও বোঝাপড়া আমাদের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসের নতুন অধ্যায়। এতেই মনে হচ্ছে বাঙালী আবার জাগছে।
    বলা বাহুল্য, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আগে বাঙালী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠাকে আমি অত্যাবশ্যক মনে করি। কারণ এই যে, জাতীয়তাবাদ বর্তমানে জীবীত বাঙালীদের নিজেদের মধ্যে ছাড়াও, গত একহাজার বছর ধরে জন্ম নেয়া বাঙালীর সংগে একটা আত্বীয়তাবোধ সৃষ্টি করে এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্যও হাত বাড়িয়ে দেয়। মানুষে মানুষে এভাবে নৈকট্য এলেই ত সাম্য, মৈত্রী, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। এই জাতীয়তাবাদ ধর্মব্যবসায়ী জামাতে ইসলামির চক্ষুঃশূল। বাঙালীর জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের জন্য তারা একাত্তরে পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীকে বাংলার ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যায় সহায়তা করা ছাড়াও নিজেরাও হত্যাকান্ড চালিয়েছে। বাঙালী বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় তাদের একক অভিযান প্রমাণ করে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে তারা কত গভীরভাবে ঘৃণা করে। তাদেরকেই বাংলার মাটিতে পুনর্বাসনের জন্য বিশ্বাসঘাতক জিয়াউর রহমান বিএনপি নামক সিভিলিয়ান বাহিনী গঠন করেছিলেন। বস্তুতঃ জামাত-বিএনপি মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ এবং জামাতকে রক্ষা করার জন্যই বিএনপির জন্ম হয়েছে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ পুনর্বার বিজয়ী হলে আমাদের সমাজ সামপ্রদায়িকতার বিষমুক্ত হবে এবং জামাত-বিএনপিকে জনগন ভুলে যাবে একটি দুঃস্বপ্ন হিসাবে।

    আমার কোন সন্দেহ নেই আমার জ্ঞানপাপী বেনামি পাঠকের গা থেকে জামাত-বিএনপি ব্রান্ড সামপ্রদায়িকতার সংস্পর্শের উৎকট গন্ধ বের হয়। অথবা তিনি সূঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবার কুমতলবী চীন পন্থি বিপ্লবের একজন অদ্ভূত উটের সওয়ারী যিনি বিশ্বাস করেন ধর্মান্ধদের বিপ্লবে ভর্তি করা সহজ। অথবা তিনি একজন ইমানদার আমেরিকান যিনি মনে করেন মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বমানবের জন্য নাজেল হয়েছে।
    আমার পরিচয় লুকানো প্রাক্তন সহকর্মী অবশ্যই আমার চেয়ে বেশি জানেন এবং বোঝেন। তাইত তিনি আমার সীমাবদ্ধতা ধরতে এবং প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতে পারেন। আমার মুশকিল আমি আমার গন্ডির বাইরে যেতে পারিনা। আমি বাংলাদেশের জন্য কেতাবী সাম্যবাদের যেমন সম্ভবনা কম দেখি তেমনি মুক্তবাজার অর্তনীতিকে দেখি বাংলা দেশের গরীবের মরণ ফাঁদ হিসাবে। অর্থনীতিবীদগন দেশের অর্থনৈতিক আগ্রগতির তুলনার সুবিধার্থে কোন একটি বছরকে ভিত্তি হিসাবে ধরে নেন, তেমনি আমি দেশের উন্নতির মূল মাপকাঠি হিসাবে আমার গ্রামকে ধরে নিই। আমার গ্রাম থেকে বিলাত, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য সহ বহু দেশে মানুষ যায় অর্থোপার্জনে। আমার গ্রামে পাকা বাড়ী আছে, বাড়ির অনেক বাইরে পাকা পায়খানা আছে। অনেক পুকুরে পাকা ঘাট আছে। অনেকের বাড়ীতে সোলার বিদ্যুৎ আছে, রেডিও-টিভির ত কথাই নেই। কিন্তু সবাই লুঙ্গি কিংবা ধূতি পরে। তাদের খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, আদব-কায়দা, আচার-আচরণ সব আগের মতই আছে। আমার গ্রামে বিলাত আমেরিকার অনেক পোশাক-পরিচ্ছদ, খেলনা ইত্যাদিও আজকাল চোখে পড়ে। বাজারে গেলে ঢাকা চাঁটগার দূরান্তবর্তী শহরতলীর সাদৃশ্য দেখা যায়। কমেও গেছে অনেক কিছু যেমন মানুষের প্রতি মমত্ব, গরীবের প্রতি সহমর্মিতা। পাখির কুজন-কলরব যা আশৈশব আমার কানে আমার গ্রামকে ঝঙ্কৃত রাখত, তা আর নেই। এখন কাকের কর্কশ কা কা মনে করিয়ে দেয় মানুষ ও প্রকৃতির সেই ঘন প্রেমের সম্পর্ক আর নেই। আর যে সকল প্রতিষ্ঠানের অদৃশ্য শক্তি মানুষের সমষ্টি জীবন ধারন করে সামাজিক সুখশান্তি বিধান করত, জামাতে ইসলামির ভাবধারার প্রচার কর্মীরা ছাড়া অন্যদের সেভাবে খুব কম দেখা যায়। তবে যখন ভোট আসে তখন পরিবেশ সরগরম করতে আওয়ামি লীগ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। তখন অবশ্য জামাতের গলা বেশি শোনা যায়না। দেশের দুটি প্রধান দলের কর্মীদের মুখে স্বাধীনতার ঘোষক ও জাতির পিতার শ্রেষ্ঠত্বের ঝগড়া শ্রোতাদের বেশ মনোরঞ্জন যোগায়। সামান্য রাজনৈতিক কথাবার্তার সেটাই বছরে একমাত্র সময়। তবে তা অবশ্যই আমার ইমেইলকারী বন্ধুর মতাদর্শ মোতাবেক হতেই পারেনা। সেখানে ক্যমিউনিষ্ট পার্টি মার খাবে, ওয়ার্কার্স পার্টি দালাল এবং জাসদ ভাড়াটিয় হিসাবে আখ্যায়িত হবে। সেখানে রাজনীতির একমাত্র পাসোয়ার্ড স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ।
    আমি ১৯৯৬, ও ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল কেমন আছে তা দেখার জন্য অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি। সর্বত্র যে পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখেছি তা কম-বেশি আমার গ্রামের মতই। আমি বিএনপির রাজনীতিকে আমার ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাধনা-সংগ্রামের বিরুদ্ধে একট মারাত্বক ষড়যন্ত্র মনে করি। অন্যদিকে আমি মনে করি আওয়ামি লীগের কারণে আমি এখনও জনগনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। আওয়ামি লীগের কারণেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল বাঙালীর সংগে আমার আত্বীয়তা অটুট থাকবে।সত্যিকথা বলতে কি, আমি এখনও আমার নাম-না-জানা বন্ধুর বিপরীতে নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারি বলেই, আওয়ামি লীগের ভিশন-২০২১কে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি সংগ্রাম মনে করি। (আমার কল্পনায় রাজনৈতিক দলের যে রূপ আছে, সেখানে পৌঁছতে আওয়ামি লীগ যথেষ্ট সময় নেবে)। আপন পরিচয়ে সংকোচগ্রস্ত সুজন বন্ধুকে বলছি, ''অমর কাব্য তোমরা লিখিও বন্ধু, যাহারা আছ সুখে''।





    ।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।