Back to Front Page বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার একজন সোনার মানুষ দেখেছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ |
মুক্তচিন্তা কিসের এতো কথা বেলাল বেগচীৎকার সংস্কৃতিবাংলাদেশের কাঁচা বাজারের চীৎকার ও বস্তি-সংস্কৃতির একটি মিশ্র ভাইরাস এখন মহামারি হয়ে ঘরে ঘরে, পাড়া মহল্লা, রাস্তাঘাট, ক্ষেতখামার, দোকানপাট, কলকারখানা, অফিস আদালত, টেলিফোন-মোবাইল, মিডিয়া, সিনেমা, টিভি-রেডিও, খেলার মাঠ এমন কি পার্লামেন্টকেও আক্রান্ত করেছে। প্রতিদিন বন্যার পানির মত লোক বাড়ছে বলে প্রতিদিনই কাজকর্মে যেমন চীৎকার বাড়ছে, তেমনি বেড়ে যাচ্ছে বেকার, ভিক্ষুক, হতদরিদ্রের ক্ষোভ ও চীৎকারের তীব্রতাও। অত্যাচারিত, লুন্ঠিত, বঞ্ছিতদের আর্তনাদ এখন আকাশ ফাটা চীৎকার হয়ে আল্লার আরশ ফাটিয়ে দিচ্ছে। সাধারনের ধারণা চীৎকার না করলে কর্তারা কথা কানে তোলেনা। কিন্তু ১৫০ মিলিয়ন মানুষের কয়েকশ বিলিয়ন সমস্যার চাপে কর্তারা যে কানে তুলো গুঁজে হাটেন, সাধারনের তা জানা নেই। অনেক চীৎকারেও কর্তাদের মনোযোগ পাওয়া না গেলে, ওরা মনে করে কথা না শোনাটা ক্ষমতার দাপট। মানুষ হয়ে মানুষকে অপমান! মানুষের মর্যাদা ও মনুষ্যত্বের প্রতি সন্মানবোধ বাঙালীর রক্তের ধর্ম (শুনহ মানুষ ভাই...)। অপমানিত, অভাবী, বঞ্চিতদের চীৎকার তাই অতি সহজে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে রূপায়িত হয়। শুরু হয় সাংবাদিক সন্মেলন, মানববন্ধন, জমায়েৎ, মিছিল, অবরোধ, ভাঙচূড়, হরতাল, পুলিশের সংগে ধাওয়া-ধাওয়ি, টিয়ার গ্যাস, গুলি। এ যেন মাছের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা কিংবা ক্রেতা-ক্রেতায় কথা কাটাকাটি থেকে হাতা-হাতির নিত্যদিনের ব্যাপার। বাঙালী প্রতিভাবান, বুদ্ধিমান ও সাহসী একটি জাতি। একবিংশ শতাব্দীর মানুষের সংগে তারাও তথ্যবিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছে। সারা বিশ্ব এখন বাঙালীর বিচরণ ক্ষেত্র। (থাকবনা ক বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে--ধন্যবাদ নজরুল)। চীৎকার সংস্কৃতি বাংলাদেশকে আর মানায় না। বুদ্ধিমান, মেধাবী, মনোযোগী, বিনয়ী, অগ্রগামী মানুষ চাওয়া-পাওয়ার ইচ্ছাপূরণের জন্য জিহ্বার মাংশপেশীগুলি নয়, মগজের কোষগুলির উপর নির্ভর করে। তিতুমীর কলেজের ছেলেমেয়েরা একটা বাসের দাবীতে রাস্তায় নেমে প্রমাণ করল তারা ছেলে মানুষ এবং চীৎকার সংস্কৃতির সংক্রমনে আক্রান্ত। কিন্তু সবচেয়ে প্রকট হল, ছাত্রদের রাস্তায় নামার আগে তাদের আবেদন, নিবেদন বা অভাব-অভিযোগ কলেজ কর্তৃপক্ষের কানে উঠেনি বা ঢোকেনি। সে যাই হোক, রাস্তায় নামার পরে যে দাবী কর্তপক্ষ মেনে নিল, আগে তা মেনে নিলে ছাত্রদের জন্য অনাঙ্খিত এমন কি অপরাধমূলক রাস্তা-অবরোধ নামক জনদূর্ভোগের ঘটনাটা ঘটত না। এ জাতীয় ঘটনার জন্য একবার সরকারসহ যে কোন ব্যবস্থাপনা কতৃপক্ষের শাস্তি হলে, বাকীদের টনক নড়ত। প্রতিটি সমস্যার গতিপ্রকৃতি, তার সমাধনের উপায় ও সামর্থের বিষয়গুলি ত্রাণকর্তা ও ভুক্তভোগী সকলকেই জানতে হবে। চীৎকারে মেজাজ বিগড়ায়; মাথা ঠান্ডা থাকে না। তাই সমস্যারও সমাধান হয়না। পরিণামে হিংসা-প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে মরতে হয় সকলকে। চীৎকার করলে তেল, গ্যাস, পানি আসবে না, দূর্নীতি, দ্রব্যমূল্য ও জানজট কমবেনা। প্রয়োজন সদিচ্ছা, যুক্তি-তর্ক, শলা-পরামর্শ, বিতর্ক-বিশ্লেষণ, জ্ঞান-প্রযুক্তি, সামর্থ এবং গতিশীল নেতৃত্ব। এর যে কোন একটির অভাব হলেই বেঁধে যায় বাক-বিতন্ডা, ঝগড়া-ফ্যাসাদ; চীৎকার দুষণে মানুষের চিন্তা-চৈতন্য নষ্ট হতে থাকে। শিকড় কাটা লতার মত মরে যায় বাঙালীর স্বভাবজাত নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার। |
।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।