NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

মুক্তচিন্তা


কিসের এতো কথা


বেলাল বেগ

রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ

ইতিহাসের প্রথম স্বাধীন বাঙালী রাষ্ট্রে, প্রথম সংবিধানের অধীনে, প্রথম নির্বাচনে, স্বাধীন নাগরিক হিসাবে প্রথম ভোট দিতে গিয়ে ভীষণ মর্মাহত হয়েছিলাম। গর্বে, আনন্দে টগবগিয়ে ভোটকেন্দ্রর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, একজন পরিচিত জান-কোরবান আওয়ামী লীগ কর্মী মহাখুশিতে ছুটে এসে বিনয়ে গদগদ হয়ে জানাল, আমার কষ্ট বাঁচাতে আমার ভোটটা সে নিজেই দিয়ে দিয়েছে। ছেলেটির বিদ্যাবুদ্ধি, সংস্কৃতিবোধ বিবেচনায় তাকে বকা দিতেও করুণা হয়েছিল। সে যে স্বাধীন মানুষের পবিত্রতম দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের বিষয়টিকে তার অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে ধরে নোংরা করেছে, এ বোধ তার ইহজন্মেও হবে না।
এর দু'বছরের মাথায় স্বাধীনতার শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অভিশাপ নেমে আসে। নিজেদের শুভ বুদ্ধি, জ্ঞানবিদ্যা, সংস্কৃতি, আত্মসন্মানবোধ বিসর্জন দিয়ে একপাল লোভাতুর নষ্ট মানুষ রাজনীতির নামে জড়চৈতন্য সামরিক সৈরাচারীদের সংগে আঁতাত করায়, মানব সভ্যতার রাজনীতি নামক প্রতিষ্ঠানটিই বিলুপ্ত হয়ে পড়েছিল। রাজনীতির নির্লজ্য দুবৃত্তায়ন, প্রহসনমূলক নির্বাচন, ভোটের হরিলুট ইত্যাদির ফলে জনগণের সামনে ক্ষমতাখাদক এমন এক শ্রেনীর মানুষের আবির্ভাব হলো যাদের আর রাজনীতিবীদ বলা যায় না। ওদের রাজনীতিবাজ বা রাজনীতিখোর বলা চলে। বর্তমান সময়ে আওয়ামী নেতৃত্বের মহাজোট সরকারের রাজনীতিতে দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ ও শুভবুদ্ধি প্রবাহের একটি লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বটে কিন্তু জনগণের সামনে এখনও রাজনীতিবাজদের বেপরোয়া দাপটের কমতি নেই। প্রকৃত রাজনীতিকদের স্বপ্ন থাকে, ‘‘মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদের লোক’’। আর রাজনীতিখোরেরা জনগণকে কি চোখে দেখে সে সম্বন্ধে আমি আমার একটি পুরানো গল্প আবার বলতে চাই।
মনে করুন আপনি খর দুপুরে গ্রামের নির্জন পথ ধরে দূরে কোথাও যাচ্ছেন। পথে দেখলেন মাঠের মধ্যখানে অশ্বথ গাছের ছায়ায় একটি ন্যাংটো রাখাল ছেলে একাকী বসে আছে, রাস্তার অন্যদিকে তার গরুর পাল চরে বেড়াচ্ছে। আপনি সেখানে আসতেই আপনার প্রশ্রাবের ভয়ানক বেগ চাপল। আপনি কোনদিকে ফিরে বসবেন? অবুঝ হলেও মানবসন্তানটির দিকে কাপড় তুলে আপনি পেশাব করবেন না। আপনি বসবেন অবোধ কিন্তু সংখ্যায় অধিক পশুদের প্রতি মুখ করে। কিন্তু রাজনীতিবাজের ওসব সূক্ষ্ম বোধ নেই। জনগণ গরুছাগল বা ন্যাংটো খোকা যাই হোক, তাদের কিছুই যায় আসে না।
বিএনপির রাজনীতিবাজদের দিকে চেয়ে দেখুন। তাদের অত্যাচার, লুন্ঠন ও দুঃশাসনে অতীষ্ঠ হয়ে জনগণ তাদের আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিল। তারা বলল এটা নির্বাচন কমিশনের কারসাজি, সেনাবাহিনীর ষড়যন্ত্র; প্রহসনের নির্বাচন। কিন্তু তারা সংসদে গেল সংসদ অকার্যকর করতে আর নিজেদের বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি নিতে। নতুন সরকারের প্রথম দিন থেকেই সরকারের উৎখাতে তারা মেতে গেল। অস্ত্র হাতে দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার মত করে, তাদের তৈরি দুঃসহ সমস্যাগুলি সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে তার বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু করেছে বিএনপি। এখন সরকার পতন আন্দোলনের জন্য বিভাগীয় শহরগুলিতে গান্ধী জিন্নাহ সুকার্নো শেখ মুজিবদের দুনিয়া কাঁপানো স্বতঃস্ফূর্ত লক্ষজনতা সমাবেশের নকল করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে ভাড়া করা শ্রোতা আনা হচ্ছে। আবার এক ধরনের রাজনীতিবাজদের ঐ সমাবেশ বানচাল করার বাহাদুরি নিতে এবং দলীয় লুটতরাজ ও সৈরাচারে লিপ্ত হতে দেখা যাচ্ছে। বোঝা গেল, রাজনীতিবাজরা বিপুল সংখ্যায় ভোট দেওয়া জনগণকে এখনও গরুছাগলই মনে করছে। তারা ক্ষমতান্ধ বলেই জনগণ যে দুই যুগ ধরে তাদের কাপড় তোলা দেখেছে, এ সহজ কথাটা ভুলে গেছে। তাদের নষ্ট মগজ ও ভোঁতা চৈতন্যে আর ধারন ক্ষমতা অবশিষ্ট নেই বলে তারা ধারনাও করতে পারেনা যে যুগ পাল্টাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সভ্যতা, মানবতা ও স্বাধীনতার জন্য বাঙালীর চিরন্তন সংগ্রামের ধারা আবার ফিরে আসছে।
স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণের এ সূচনালগ্নে, কেউ যেন আর জনগণের সামনে কাপড় তোলার ধৃষ্টতা না দেখায়।





Contact Us