NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা:

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
  • একজন সোনার মানুষ দেখেছি
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা
  • রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ
  • চীৎকার সংস্কৃতি
  • ফালতু চীৎকার
  • পুরানো ক্ষতে খোঁচার যন্ত্রণা
  • নিমতলীর নরককুণ্ড বাংলাদেশের নিয়তী
  • কে বাঁচাবে বাংলাদেশ?
  • আবার বুঝি জাগছে বাঙালী
  • ভূতুড়ে রাজনীতি তাড়িয়ে দিন
  • নিউইয়র্কে সেদিন সন্ধ্যায় যা ঘটেছিল
  • সাবধান বাঙালী! এখন যুদ্ধাবস্থা
  • রক্ষীবাহিনীর জুজুর ভয়
  • সামাজিক ও প্রাকৃতিক ভারসাম্যের সন্ধানে
  • এক দল অমানুষ ও প্রেতাত্মার গল্প
  • আমি লীগের খপ্পরে আওয়ামী লীগ
  • ওরা রাতে দেখে, দিনে দেখেনা
  • মুক্তচিন্তা


    কিসের এতো কথা


    বেলাল বেগ

    জেগে ঘুমিয়ে দেখা


    এক কালে পত্রপত্রিকার বাঁচার রসদ ছিল সরকারী বিজ্ঞাপন। ঐ মূলা দেখিয়ে সরকারও মিডিয়াকে তার ঢোল পেটাতে প্ররোচনা দিত। কালক্রমে সরকার তোষণ, দুএকটি বাদে, সব পত্র-পত্রিকার একটি বদাভ্যাসে পরিণত হল। এতে অবশ্যই টেক্কা দিত নতুন জন্ম নেয়া দল-সমর্থক বা মতলববাজ পত্রপত্রিকাগুলি। সরকারের পর সরকারের মেয়াদে চাটুকারিতার লজ্জাকর অভ্যাসটি এক শ্রেনীর পত্রিকা-মালিক-স¤পাদকের মজ্জাগত হয়ে গেল। তার অনৈতিক প্রভাব অনেক সাংবাদিকের উপরেও পড়েছে। আমাদের দেশে সরকার যেহেতু দুটি দলের পিংপং, আমাদের মিডিয়া জগৎও তেমনি আবাহনী মোহামেডান গ্যালারীর মত স্থায়ী সরব সমর্থক। আমাদের দুর্ভাগ্য আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজের ধারক ও চালিকা শক্তি যে মিডিয়া তথ্যপ্রবাহের বিপ্লব এনেছে, তার দেখা আমরা এখনও পাই না। আমাদের মিডিয়া এমন এক দূরারোগ্য রাজনৈতিক ভাইরাসে আক্রান্ত যা রাষ্ট্র ও জনগনের প্রতি তার স্বাভাবিক দৃষ্টিটাকে ক্রুটিপূর্ণ করে রেখেছে। তবে মিডিয়ার এ জটীল-কুটীল বৃদ্ধিতে বড় একটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের রাষ্ট্রের জন্ম ও সংগ্রামের ঝঞ্ঝাময় ইতিহাস এবং তার সাংঘর্ষিক বিশ্লেষণের ফলে উদ্ভূত পরিবেশ-পরিস্থিতি। সে যাই হোক, আমাদের কষ্টটা এই জায়গায় যে আমাদের মিডিয়া থেকে আমরা আমাদের দেশ, জাতি ও সমাজের সত্য-মিথ্যা ধরতে পারিনা এবং এজন্য সংগ্রামী জাতি হিসাবে আমাদের ন্যায্যতঃ প্রাপ্য বিকাশের ধারা বিঘ্নিত ও ব্যাহত হয়ে চলেছে।
    জনগনের কল্যাণ ও জাতীয় স্বার্থরক্ষার মূল ক্ষেত্রগুলিতে আমাদের মিডিয়ার অনৈক্য, অক্ষমতা, অপারগতা, দায়িত্বহীনতা, অযোগ্যতা ও অবহেলার জন্য স্বাধীনতা উত্তরকালে আমাদের জনগনকে যে পরাজয়, অপমান ও ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে, তা কখনও পরিমাপ করা যাবে না। সামরিক সৈরাচারী সরকারগুলি জাতির সর্বোচচ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য বীর, অগণিত সামরিক বেসামরিক ব্যক্তিকে কেবল হত্যাই করেনি, হত্যাকান্ড চাপা দিয়ে হাজার বছরে পরিশীলিত জাতির নৈতিকতা ও মানবতাবোধের কন্ঠরোধ করেছে সকল মিডিয়া তথা জীবীত সকল বাঙালীর চোখের সামনে। পাকিস্তানের অসভ্য ও অগনতান্ত্রিক শক্তির মোকাবেলায় চাপিয়ে দেয়া, অপরিহার্য যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন, সম্পদ, নারীসম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছিলাম, ধর্মের নামে শত্রুরাষ্ট্র ঐ পাকিস্তানের পদতলেই আবার তা বলি দিয়েছিল গনতন্ত্রসংহারক, বিশ্বাসঘাতক বাঙালী সামরিক দখলদারেরা। বঙ্গবন্ধু-হত্যা পরবর্তী ৩৫ বছর মুক-বধির-স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল বাঙালীর হাজার বছরের প্রবাহমান জীবন। আমাদেরকে এ পরাজয় ও অপমান গিলিয়ে হজম করতে সাহায্য করেছিল আমাদের মিডিয়া। আমাদের জেগে ঘুমানো মিডিয়ার বদৌলতে, আমরা ভুলতে বসেছিলাম একদা আমাদের প্রতিটি ঘর দুর্গ হয়েছিল; উত্থিত লক্ষ লক্ষ বীরের বীরত্বগাঁথায় ভরে গিয়েছিল বাংলার আকাশ-বাতাস।
    বিচার বিভাগে রক্ষিত বাঙালীর বিবেক রূপকথার ফিনিক্স পাখির মত আবার জেগেছে। বঙ্গবন্ধু-হত্যার পাহাড়-চাপা অন্যায়ের বিচার করে তাঁরা জাতির আত্মর্যাদাবোধ ফিরিয়ে এনেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অফিসার জিয়াউর রহমান ও হোসেন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতাদখলকে অপরাধ এবং তাদের শাসনকে বেআইনী ঘোষণা করে আমাদের মহামান্য বিচারকগন একদিকে যেমন মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের রাষ্ট্রের গৌরব পুনরুদ্ধার করেছেন, অন্যদিকে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অপহৃত ও ছিন্ন পাতাগুলি পুনঃ সংযোজন করেছেন। ফলে আমাদের জাতীয় চেতনার মরা গাঙে আবারও বাণ ডেকেছে।
    'আমাদের' শব্দটির মধ্যে সম্মিলিত শক্তির যে গর্জন শোনা যায়, তার প্রথম ও প্রধান উৎস জনগন। জনগনের পক্ষে এর জিন্মাদার পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ, সরকার ও মিডিয়া। রাষ্ট্রের এই স্তম্ভগুলির মধ্যে ম্যাজিক শক্তি আছে কেবল মিডিয়ার। ১৯৭৫র জাতীয় ট্রাজেডীর পর বাংলাদেশের দখল নেয়া পাকি-ব্যাঙালী বর্গীরা রাষ্ট্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের মত মিডিয়ারও বড় অংশ দখল করেছিল। প্রধানতঃ মিডিয়া দখল কৌশলের কারণে বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে সংবিধান পরিবর্তন, জামাতে ইসলামি সহ স্বাধীনতার শত্রুদের পুনঃক্ষমতায়ন, বেআইনী ক্ষমতাদখল স্থায়ীকরণের লক্ষে বিএনপি-জেপি সহ অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের জন্মদান, ইত্যাদি ষড়যন্ত্র কায়েম হতে পেরেছিল। আমাদের সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় বাঙালী জাতি ও বাংলাদেশি নাগরিকদের এখন অতীতের শাপমুক্তির বর পাওয়া গেল। এবার জাতির সামনে তার মিডিয়ার অগ্নিপরীক্ষার দিন সমাগত। মুক্তিযুদ্ধের শত্রু অপসারণ ও শত্রুতার নিরসন একটি কঠিন সংগ্রাম কারণ প্রতিপক্ষ আত্নরক্ষার্থে গা ঢাকা দেবে কিন্তু মুখিয়ে লেলিয়ে দেবে তাদের ধূর্ত মিডিয়া-দালালদের।

    ৭৫-ট্রাজেডীর পর জিয়া-গোলামাজম-পাক-মার্কিন-সৌদি চক্রের রাজনৈতিক বাহিনী- চারদলীয় জোট প্রায় এক চেটিয়া রাজত্ব কালে জনগনের মৌলিক সমস্যা (গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদি) ও অভাব-অভিযোগের কোন সুরাহা হয়নি। উপরন্তু, দুর্নীতি, লুট-তরাজ, হত্যা-নারী নির্যাতন প্রভৃতি অপরাধের চাপে জনগনের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। গ্রীক পুরাণের প্যান্ডোরা বাক্সের মত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল 'হাওয়া ভবন'। ইসলামের নামে ধোকা-দেয়া জামাত-বিএনপি জোট, বিপুল ভোটে নির্বাচিত বর্তমান জনপ্রিয় সরকারকে কাজ করার কোন সুযোগ না দিয়েই ইতোমধ্যে সকল সমস্যার জন্য দায়ী ও দোষী ঘোষণা করে যুদ্ধংদেহী মনোভাব ব্যক্ত করেছে। তাদের বশংবদ মিডিয়ার জন্য ইঙ্গিতটা সু®পষ্ট। তারা হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায় মেনে নেবেনা। তাদের এই মনোভাবের মধ্যে অতীতের স্মৃতিবহ ভয়বহতা লুকিয়ে আছে।
    এদিকে, নবজাগ্রত বাংলাদেশের বিস্ময়ের ঘোর এখনো কাটেনি। কিন্তু ঘোরে থাকলে চলবেনা; সামনেই বিপদ। আমাদের বিজয়ের সংবাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, আসন্ন বর্গী হামলা সন্মন্ধে সতর্ক করে দিতে হবে জনগনকে। কাজটি করবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শক্তিতে বলীয়ান মিডিয়া। মিডিয়ার যে অংশ ১৯৭৫ পরবর্তী দুঃস্বপ্ন-যুগে জনগন থেকে বিচিছন্ন হয়ে পড়েছিল, তথ্যপ্রবাহ-বিপ্লবের এ যুগে বিশেষ করে মিডিয়ার অর্ন্তনিহিত শক্তি উপলদ্ধি করে তাদের ১৯৫২তে জাগ্রত জনগনের কাতারে আবারও ফিরে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন আমরা কেউ যেন আর বাংলাদেশের সংগ্রামী বীর জনতার দুঃখ ও অনিষ্টের কারণ না হই; চোখ থাকিতে অন্ধ না হই। বাংলাদেশের মিডিয়া একাত্তরের গৌরবে আবার যদি দেপীপ্যমান হতে পারে, রাজনীতির বন্ধ্যত্ব, উন্নয়নের দিকভ্রান্তি, দূর্নীতির রাহু, তরুণের উশূঙ্খলতা, লুটেরার থাবা কোন কিছুই আর আমাদের দাবীয়ে রাখতে পারবেনা।





    ।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।