Back to Front Page বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা: |
মুক্তচিন্তা কিসের এতো কথা বেলাল বেগআমি লীগের খপ্পরে আওয়ামী লীগ
নানা মতের কমিউনিষ্ট পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাংলাদেশে আর কোন রাজনৈতিক দলের নিজ নিজ আদর্শের অনুসরণে কঠোরতা বা বাধ্যবাদকতা লক্ষ্য করা যায়না । মানুষ তাদের আদর্শকে অবিশ্বাস্য বা ক্ষতিকারক যাই মনে করুক, তাতে তারা দমে যায়না। তাদের ধারণা একদিন না একদিন সত্য জেনে মানুষ তাদের পথে আসবে। তাই শত বাঁধার মুখেও তারা তাদের সংগ্রাম আব্যাহত রাখার প্রয়াস চালিয়ে যায়। জামায়াতের কথা ধরা যাক। জামায়াত মানুষের তৈরি কোন প্রতিষ্ঠান যেমন সংবিধান, জাতীয় সংসদ, বিচার বিভাগে বিশ্বাস করেনা। তারা কোরাণ ও হাদীস ভিত্তিক আল্লার আইনে বিশ্বাস করে। এটা অর্জন করার জন্য আত্মহত্যা এবং নরহত্যার মত অপরাধেও তারা লিপ্ত হয়। মধ্যযুগীয় আরবদের ফ্যাসিবাদসুলভ এই ধর্মীয় উন্মাদনায় তারা গত প্রায় সাত দশক ধরে বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ বহু দেশে স্বজাতি মানুষদের বিরুদ্ধেই সহিংস যুদ্ধ চালিয়ে যাচেছ। সভ্যতা প্রত্যাখ্যান করা এই সন্ত্রাসী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানটিকে তাই নিষিদ্ধ করার দাবী উঠছে সারা বিশ্বে। কিন্তু পরাশক্তিগুলি ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে প্রকাশ্যে নির্মূল করার পক্ষে থাকলেও গোপনে স্বীয় স্বার্থে ব্যবহার করে। এজন্য জামাতকে নির্মূল করাও সহজ নয়। যতদিন পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদের পোঁ ধরা মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলিতে গনতন্ত্র না আসবে, জামাতের অস্ত্র, অর্থ ও জনবলের সরবরাহে কোন কমতি হবেনা। ফলে তারাই যে শক্তিশালী এবং অভ্রান্ত এমন ধারণাটি তাদের কর্মীদের মনে বদ্ধমল হয়ে গেছে। বলা বাহুল্য জামাত-কর্মীদের আনুগাত্য একজন ডাকাতের দলানুগাত্যের মতই অপরিহার্য; অন্যথায় বিপদ। এখানে অস্তিত্বের স্বার্থেই দলের আইন কানুন মানতে হয়। ক্যমিউনিষ্ট পার্টিগুলিতে মোটামুটি দুধারা বিদ্যমান। একটি রক্তাক্ত বিপ্লব বা গনহত্যার নীতিতে জামাতীদের মত অনড়। ডাকাতদলের মত এদেরও দলের শৃখলার বাইরে যাবার উপায় নাই। অন্যদিকে, গনতন্ত্রের মধ্যদিয়ে জনতার মুক্তিসংগ্রাম এগিয়ে নিতে বিশ্বাসী ক্যমিউনিষ্টগন, কেবলমাত্র আদর্শিক তাগিদেই কাজ করে। অন্যান্য গনতান্ত্রিক দলের সংগে থেকেই কাজ করতে হয় বলে ক্যমিউনিষ্ট পার্টিগুলিতে আগের দিনের যুদ্ধংদেহী ভাবটা নেই। তা ছাড়া ক্যমিউনিজম সম্বন্ধে যথেষ্ট পড়াশোনা করতে হয় বলে এখানে দলে দলে যোগদানের মত ঘটনা ঘটেনা। বস্তুতঃ আজকের দিনের ক্যমিউনিষ্ট একজন স্বচালিত কর্মী, নিজের গরজেই সে দলের আনুগাত্য বরণ করে। একেবারে বাম ও একেবারে ডান চিন্তার মানুষগুলির মাঝখানে সমাজতন্ত্রের বাহারি টি-শার্ট পরা কয়েকটি দল ছাড়া আছে আওয়ামি লীগ, বিএনপি, ও জাতীয় পার্টি। এরা বাঙালী জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ইসলাম-বান্ধব, ধর্মনিরপেক্ষতা যাইই বলুক না কেন, শক্তির জন্য ওরা একই ব্যাটারী ব্যবহার করে। ব্র্যান্ডের তার নাম ধনতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতি। বিষয়টি তারা প্রকাশ্যে বলেনা কারণ ১৯৫৪ সন থেকে গরীবের মুক্তির ধ্বনন্তরী হিসাবে চাউড় হওয়া সমাজতš নামক বিষয়টি হঠাৎ ঘর্ণীর বিপদ ডেকে আনতে পারে। গনতন্ত্রই তাদের জন্য নিরাপদ। কিন্তু ব্যাপক দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও পশ্চাদপদতার কুজ্ঝটিকায় জনগন গনতান্ত্রিক মুক্তির যাদুদন্ডটি ঠাহর করে উঠতে পারেনা। তাই তারা ভীড় করে বাড়ীর কাছের সে লোকটির দরবারে যার গলার জোরের সংগে আছে অর্থ, অস্ত্র এবং বাহিনীর জোর। এ লোকটি কখনো আওয়ামি লীগ, কখনো বিএনপি কখনো জাতীয় পার্টি করে। যখন জাতীয় পার্টি করত, বলত, এটা এরশাদের পার্টি, তিনি যে আটষট্টি হাজার গ্রাম বাঁচানোর সংগ্রাম করছেন, তার মধ্যে আমাদের গ্রামটাও আছে। তাকেই ভোট দিতে হবে। এরশাদের পরে যখন বিএনপিতে গেল সে বলল বিএনপি হচেছ স্বাধীনতা র ঘোষক মেজর জিয়ার বেগম খালেদা জিয়া ও জ্যেষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানের পার্টি। তারা ভারত ও তার দালাল আওয়ামি লীগের হাত থেকে মুসলমানের এই দেশ আর মুসলমানের ধর্ম ইসলামকে বাঁচাতে এই পার্টি বানিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে মানুষ বিএনপির ধর্ম-ধাপ্পা ধরে ফেলায় জনগনের বাড়ীর কাছের ঐ নেতা রাতারাতি মুজিব কোট পরে বাজারের মাইকের দোকানে শেখ মুজিবের ভাষণ চালিয়ে দিল। জনগন ছুটে এলে নেতা বললেন, জননেত্রী এ অঞ্চলে আওয়ামি লীগের দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন- এখন সব আমার ইচছাতে হবে, আও এখন আমিই লীগ (আও য়ামি লীগ)। ভারতবর্ষ যাতে ভবিষ্যতে কখনই শক্তিশালী হতে না পারে সে জন্য আমাদের সাদা চামড়া বৃটিশ প্রভুরা ধর্মের দাও দিয়ে কসাইয়ের মত ভারতবর্ষকে তিন টুকরো করে ফেলে গেছে। ধর্মের উন্মাদনা মানুষের মনে এমনই গেঁথে গিয়েছিল যে, হাজার বছর ধরে পাশাপাশি শান্তিসুখে বাস করা হিন্দু-মুসলমান হঠাৎ পরস্পরের শত্রু হয়ে গেল। পাকিস্তান হবার পর সামপ্রদায়িকতার ঘৃণ্য পরিবেশ থেকে মানুষকে ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজে ফিরিয়ে আনার জন্য মওলানা ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের চেষ্টায় গড়ে উঠেছিল আওয়ামি লীগ। খুলির ভিতর থেকে ধর্মের কুহক কেটে গেলে বাঙালীরা আবিষ্কার করল পাকিস্তান তাদের শোষণ করে করে গরীব বানিয়ে ফেলেছে। তাদের সংস্কৃতি ও ভাষা ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। বাঙালীর এই চেতনাকে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপান্তর করেই ইতিহাসের প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তাঁর দল আওয়ামি লীগ। এই মানুষটিকে ১৯৭৫ সনে সপরিবারে হত্যা করেই বাঙালীর শত্রুরা গোপনে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিল। তারপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল আবারো শক্তিশালী হলে, হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের সম্ভবনা দেখা দিল। এই সম্ভবনাকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করতেই শত্রুরা আওয়ামি লীগের পুরো নেতৃত্বসহ শেখ হাসিনাকে তাঁর বাবার মতই চিরতরে শেষ করে দেবার জন্য প্রকৃত যুদ্ধের মতই বোমা হামলা চালায় প্রকাশ্য দিবালোকে। পনের কোটি মানুষের অšরের কোন টানেই হয়ত সেবার শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেবার পর ১৯৭৫ এর বিশ্বসঘাতকেরা তাদের সহযোগী জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার শত্রু জামাতে ইসলামি বাংলার মাটিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ফিরে এল পাকিস্তানী ধারার ধর্ম-ধাপ্পা রাজনীতি। আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল বাঙালী জাতীয়তাবাদ ধ্বংসের সর্বনাশা চক্রান্ত। এখন সকলের মনে রক্ত হিম করা ভয় উঁকি দিচেছ শেখ হা সি না ও আওয়ামি লীগ কি আর একবার বাঁ চতে পারবে? গ্রামে গঞ্জে কলেকারখানায় হাটে-মাঠে, শহর-বন্দরে, দেশে-বিদেশে আজ যারা আও-আমি-লীগ করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অন্যায়, দর্নীতি, জুলুম ও লুটতরাজ করে, তাদের অšরে দায়িত্ব, কর্তব্যবোধ, দেশপ্রেম ত দরের কথা, মনুষ্যত্ববোধই নেই। বঙ্গবন্ধু, জেলখানায় নিহত চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ, বেঁচে থাকা লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক কর্মী, জনগনের নেত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর দল আওয়ামি লীগের অগণিত নেতা-কর্মীর অপরিসীম ত্যাগ-তিতীক্ষা ও আত্মাহুতির প্রতি সন্মান জানানোর ক্ষমতাই লোপ পেয়েছে এই সব আমি-লীগারদের। আজ যদি বঙ্গবন্ধুর মত শেখ হাসিনাও শীর্ষস্থানীয় আওয়ামি নেতৃত্বসহ শত্রুর হাতে নিহত হন, এই সব আমি-লীগাররাই শত্রুর সংবর্ধনায় ফুলের মালা নিয়ে দাঁড়াবে সর্বাগ্রে। ইনডেমনিটি এ্যাকট তুলে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে এবং একাত্তরের ঘাতকদের জেলে ঢুকিয়ে এবং ধর্মান্ধতা বিনাশে আলো জ¦ালিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে দেশকে এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামি লীগের স্বপ্ন বা¯বায়নে যারা নিরলস কাজ করছেন, ওরাই সত্যিকার দেশপ্রেমিক, ওরাই আওয়ামি লীগ; কোন্দলবাজ, দখলবাজ আমি লীগারগন নয়। আমি লীগারগন আসলে, বন্ধু বেশে আওয়ামি লীগেরই শত্রু। ওদের উৎখাত করা দরকার। |
।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।