Back to Front Page বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা: |
মুক্তচিন্তা কিসের এতো কথা বেলাল বেগএক দল অমানুষ ও প্রেতাত্মার গল্প
প্রবাসী বাঙ্গালিদের মত এমন স্বাধীনতা পৃ্থিবীর কোথাও অন্য কোন জাতির প্রবাসীরা ভোগ করে কিনা কে জানে।এখানে বাঙ্গালিরা তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দায়-দায়িত্ব, ও কর্তব্য থেকে নিরাপদে মুক্ত। নিউইয়র্কে ক্যম্পিউটরের র্যামের মত পকেটের ডলারই একজন বাঙ্গালির শক্তি।ডলারের রেঁদার ডলায় প্রাচ্যের মান্যিগন্যির সামাজিক সৌন্দর্য্য জুতার হাফসোলের মত ক্ষয়ে সমান হয়ে গেছে।এখানে যে কোন ব্যক্তি যে কোন বিষয়ে যখন যা খুশি বলতে পারেন; নিজের গরু ইচ্ছে করলে লেজে দিয়ে জবাইও করতে পারেন। এহেন ব্যক্তিরা নানা ভেক ধরে আবার প্রাইভেট কোম্পানির আদলে বাংলাদেশের রাজনীতি করেন।বলা চলে নিউইয়রকবাসী বাংলাদেশি বাঙ্গালিদের ওটাই সবচেয়ে জনপ্রিয় সখ। ওই রাজনীতির উদ্দেশ্য মোটেও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি জনগনের কল্যাণ নয়; ওই রাজনী্তির লক্ষ্ দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্ষমতাবান রাজনীতিকদের পোঁ ধরে দেশে নিজ এলাকায় বা ব্যাবসায়-বানিজ্যে নিজের অবস্থানকে শক্ত করা। দেশের রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষমতা কাঠামোতে গনতন্ত্রের চর্চা না থাকাতে সেখানে উপরে উঠার ক্ষেত্রে বিরাজিত ব্যক্তিগত দলাদলি ও রেষারেষি তথাকথিত প্রবাসী রাজনীতিতেও টালমাটাল ঢেউ তোলে। প্রবাসে আদর্শ নিবেদিত রাজনীতি করে একমাত্র মওদূদী মদে মত্ত, একাত্তরের শত্রু জামাতিরাই। এই সেদিন উল্টো-হাটা পেছন-চোখা বাংলাদেশি জামাতীরা নিজেদের বউ-বিবিদের কালো কাপড়ে মুড়িয়ে একাত্তরের পাকিস্তানি দোস্তদের খুবসুরাত বালিকাদের নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সামনে এক দারুন জশ্নে-জউলুশ করল। হাতে বাংলাদেশি পতাকা, পায়ের কাছেও বাংলাদেশি পতাকা তবে তা টুপির আকারে । তারা জানাতে চাইলো বাংলাদেশ মুসলমানের দেশ, ১৯৭১ সনে বাংলাদেশে কোন যুদ্ধোপরাধ হয়নি। সুতরাং বাংলাদেশে যুদ্ধোপরাধের বিচার বন্ধ হউক। ইসলামি রাজনীতির জন্যে জিহাদ এবং বাংলাদেশের স্বাধিনতার প্রতি তাচ্ছিল্যের এক তাকলাগানো শোবিজিনেস ছিল। বড় কাজের জন্য বড় আয়োজনই বটে। জামাতের শোবিজিনেস দেখে দিনরাত সবাধিনতা ও আওয়ামি লীগের জিকির-করা একদল বাঙ্গালি মানব-বন্ধন নামক এক শক্তি প্রদর্শনীর আয়োজন করে ।স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার খবরে প্রকাশ জামাতিদের সমাবেশে লাখ লাখ ডলার খরচ করে হাজার জনতা যোগাড় করা হয়েছিল। সেখানে পাঁচ শ ডলার খরচের সঙ্গতি নেই এমন গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল নেতাদের ডাকে জ্যাক্সন হাইটসে ছুটির দিনে বাজার করতে আসা মানুষগুলি ছাড়া কতই বা লোক হবে তা সহজেই অনুমেয় । জানা গেলো জ্যাক্সন হাইটসের দেশপ্রেমিক মানব-বন্ধন আয়োজকদের প্রতিদ্বন্ধী গোষ্ঠি ওই শোতে ইচ্ছে করেই আসেনি। যুদ্ধাপ্রাধীদের বিচারের দাবীতে তারা তাদের আলাদা শো নিয়ে ব্যস্ত। গত ৮ই আগষ্ট ছুটির দিন রবিবারে জাতিসঙ্ঘের সামনে হয়ে গেলো সেই শো। দেশ থেকে আসা একজন মন্ত্রী উপস্থিত থাকা সত্বেও উপস্থিতি উপলক্ষের গুরুত্বের তুলনায় আশাব্যঞ্জক ছিলোনা। মোদ্দাকথা, স্বাধিনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ হিসাবে পরিচয়দানকারী উভয়গোষ্ঠীর সমাবেশের মোট উপস্থিতি একাত্তরের শত্রুদের সমাবেশের চেয়ে কম ছিলো। জামাতের সমাবেশের সাইজ আমেরিকান সরকার ও জনগন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জামাতের পক্ষে নিয়ে যাবে এমন কথা ভাবারও কারণ নেই। জামাতে ইস্লামি আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এর সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমায় বহু যুগ ধরে। জামাত কি মাল তারা জানে। প্রথমে পাকিস্তান রক্ষায় এবং পরে আফগানিস্তান দখলে তালিবান বাহিনী গঠনে জামাতকে তারা ফেউ হিসাবে ব্যবহার করেছে। জামাত যে ইস্লামি সাম্রাজ্যের সপ্নবিভোর জঙ্গিবাদী একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল, আমেরিকা তা ভালভাবে জানে আগাগোড়া। আমেরিকা জেনেশুনেই জামাতের সঙ্গে বন্ধুত্বের অভিনয় করে এবং নিশ্চিত ভাবে জানে যে প্রয়োজনে জামাতকে ডাকা মাত্রই পাওয়া যাবে। আর জামাতে ইসলামির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি স্যুইসাইড স্কোয়াড ও নির্বিচার নরহত্যার সমার্থক। তবে এ শোটাকে জামাত বেচবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যেখানে অজ্ঞানতার অন্ধকারে মিত্থ্যার বেসাতি করা যায়। ওখানে বরং স্বাধিনতা পক্ষের মানুষদের অনেক বেশি হুশিয়ার থাকতে হবে। নিউইয়র্ক বাঙ্গালিদের রাজনইতিক চইতন্যে এমন লাখেরাজ বেওয়ারিশ দশা বড়ই মরমান্তিক। অথচ ১৯৭৫ সনে শত্রুদের খপ্পর চলে যাওয়া দেশটি্র পুনরুদ্ধারে এদের ভূমিকাই ছিল অগ্রগণ্য। ঢাকায় যে গনআদালত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সারাদেশে বিশাল মশালের মত দপ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে তার রসদ যুগিয়েছিল এই প্রবাসীরাই।তারপর প্রতিহিংসার আগুনে জ্বলতে থাকা জামাতে ইসলামি ছাড়া দেশের রাজনৈতিক দ্লগুলি ইষট ইন্ডিয়া কম্পানির মত মুনাফামুখি হয়ে গেল। দেশ পরপর পাঁচবার দূরনীতিতে প্রথম হয়ে গেল। সুবিধাবাদীরা দুনিয়ার এমাথা ওমাথায় বসে তাদের লম্বা হাত মিলাল। দূর্নীতি রাজনীতিকে দুর্গতিতে ফেলে দিল। জাহানারা ইমামকে কেন্দ্র করে প্রবাসে যে সুস্থ, শক্তিশালী ও প্রগতিশীল দেশ-সহায়ক রাজনীতি চালু হয়েছিল, তা দলাদলির ফেঞ্চিডিল নেশায় পরিনত হল। সুস্থ রাজনইতিক চিন্তার কারণে এককালে যারা সঙ্গবদ্ধ হয়ে ছিলেন, তাঁদের ঘাড়ে এখন ব্যক্তিগত নাম-যশ-ক্ষমতাl মোহের প্রেতাত্মা ভর করেছে। তাই আজ একই উপলক্ষে পঞ্ছাস টুকরা সভা হয়।বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু বার্ষিকীতেও ওরা একসঙ্গে মোনাজাত করতে পারে না। রাজনীতির নামে নিউইয়রক বাঙ্গালিদের অর্বাচীন লজ্জাষ্কর নীতিবোধহীন আচরণ বাঙ্গালির ইতিহাস, ঐতীহ্য, শিক্ষাদীক্ষা, জ্ঞানগরিমার সংগে বেমানান। রাজনৈতিক ভাবে সচেতন মানুষগুলি্র একতাবদ্ধ হবার সর্বশেষ সুযোগ এসেছে এখন যখন হাসিনা সরকার দেশকে রাজাকার মুক্ত এবং একাত্তরের সংবিধান চালু করে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রার বদ্ধ প্লাবনের বাঁধ ভেঙ্গে দেবার যুদ্ধে নেমেছেন। আমাদের মূল শত্রু জামাতে ইস্লামি এবং তার প্রতিরক্ষায় নিয়জিত পালিত শত্রু বিএনপির মরণ কামড়েরও শেষ সু্যোগ এইটি।একাত্তরের অমানুষদের সঙ্গে জাতির এমন বাঁচা-মরার যুদ্ধের সময়ে দরদী চিন্তাশীল মানুষদের একাত্তরের পতাকা তলে সমবেত হওয়া এ মুহূর্তের একমাত্র দায়িত্ত ও কর্তব্য। বাঙ্গালী এক হলে কি না করতে পারে? একাত্তরে ঘুমের মধ্যে নিরস্ত্র অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বাঙ্গালিরা আত্মশক্তি শিখায় প্রজ্জলিত হয়েছিল এবং সবাধীনতা অর্জন করেই ঘরে ফিরেছিল।এই আমেরিকায় একজন বাঙ্গালী সর্বোচ্চ ভবন নির্মান করে কালজয়ী হয়েছেন।বাঙ্গালিরা একতাবদ্ধ হলে এই ডিসেম্বরের মধ্যেই ইউনিয়ন স্কয়ার বা সেন্ট্রাল পার্কে ৫/১০ হাজার মানুষ আমরা মিলিত হতে পারি না? পারিনা জামাত-পাকিস্তান কতৃক বাঙ্গালি গণহত্যার প্রদশনী করতে, পারে না কি গান গেয়ে আমাদের শিল্পীরা আমেরিকানদের চোখে অস্রুধারা বইয়ে দিতে? পারেনা কি আমাদের পেইনটারেরা তাদের তুলি থেকে রক্ত ঝরাতে? আর্শ্চয্য! এই নিউইয়র্ক ও আশেপাশে বেশ কয়েকজন খ্যাতনাম মুক্তিযোদ্ধা থাকা সত্তেও আমরা হা-পিত্যেশ করছি। |
।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।