NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা:

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
  • একজন সোনার মানুষ দেখেছি
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা
  • রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ
  • চীৎকার সংস্কৃতি
  • ফালতু চীৎকার
  • পুরানো ক্ষতে খোঁচার যন্ত্রণা
  • নিমতলীর নরককুণ্ড বাংলাদেশের নিয়তী
  • কে বাঁচাবে বাংলাদেশ?
  • আবার বুঝি জাগছে বাঙালী
  • ভূতুড়ে রাজনীতি তাড়িয়ে দিন
  • নিউইয়র্কে সেদিন সন্ধ্যায় যা ঘটেছিল
  • সাবধান বাঙালী! এখন যুদ্ধাবস্থা
  • মুক্তচিন্তা


    কিসের এতো কথা


    বেলাল বেগ

    রক্ষীবাহিনীর জুজুর ভয়


    আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুদীর্ঘকাল বিচরণ করা শ্রেষ্ঠ দড়ি-বাজিকর, অপ্রতিদ্বন্ধী প্রগলভ একজন নেতা ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা বা দল থেকে দলে শাখামৃগ সম লম্ফজম্ফের শানে নজুল আলোচনা বা জাতীয় অগ্রগতিতে তাঁর অবদান অনুবীক্ষন এ সবই কৌতুককর লেখার উপাদান হতে পারে। এ লেখার উদ্দেশ্য তা নয়। এ লেখার উদ্দেশ্য তিনি হঠাৎ রক্ষী বাহিনীর জুজুর ভয় পাচ্ছেন কেন তার বিষয়টি আলোচনা করা। তাঁর জন্মস্থান নোয়াখালি এলাকায় একটি প্রবাদ আছে- ’হানিত (পানিতে) বাড়ি হরে(পড়ে), গুনাগারের কলজা ধরে’। তবে কি মওদুদ সাহেবের কলজে ধরার মত কিছু ঘটছে?
    মওদুদ সাহেব পানির যে বাড়ি শুনেছেন, তা দিচ্ছে পুলিশ। একাত্তরের খুনী ও স্বাধীনতার শত্র“রা যদি পানির নীচেও লুকায়, পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবেই। ইতিমধ্যেই বিএনপি মন্ত্রীসভায় মওদুদ সাহেবের সঙ্গে একপাতে ভাত খাওয়া একাত্তরের দুই খুনী পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এই সরকারকে রাতারাতি খতম করা না গেলে, একাত্তরের শত্র“ ও পঁচাত্তর পরবর্তীকালে ওদের সংগে যোগদেয়া চক্রান্তকারীদের রঙ্গলীলা সাঙ্গ হবার একটা সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই বহুরূপী রাজনীতিককে এবার নিজের আসল রূপটার কথা ভাবতে হচ্ছে।
    বলা বাহুল্য কাহিনীটা সুবিধার নয়। অনেক চমৎকারিত্বের পর দুঃখময় পরিণাম হলে তাকে ট্য্রাজেডী বলা হয়। সদ্য বিলেতফেরৎ তরুণ টগবগে ব্যরিস্টার, আকাশ থেকে বিজলীর মত নেমে এসে জগৎটাকে চমকে দিল। রাজনীতিতে পদার্পণ সর্বোচ্চ শিখরে, বঙ্গবন্ধুর প্রাইভেট সেক্রেটারী হয়ে। সমাজ জীবনে প্রবেশ লক্ষ কোটি পল্লীবাসীর হƒদয়ে আসীন পল্লীকবি জসিমুদ্দীন-দুহিতার পাণি গ্রহন করে। যেন রূপকথার সেই রাজপুত্রের রাজ্য ও রাজকন্যা লাভ। তারপরে কি যেন হয়ে গেল। জেলে গেলেন মওদুদ তবে মুক্তিও পেলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে পল্লীকবির আবদারেরর কারণে। বলা বাহুল্য, এরপর এ কীর্তিমান মানুষটির ঠাঁই আর হয়নি আওয়ামি লীগের বিশাল জাজিমে। তারপর থেকে আওয়ামি লীগ ও বঙ্গবন্ধু তাঁর চক্ষুঃশূল। স্বাধীনতার উষালগ্নে, সেদিন এমন কি ঘটেছিল, তা আর জনসমক্ষে আলোচিত হয়নি। তবে সেটাই যে স্বাধীনতার একজন উংসাহী কর্মীকে পরবর্তীকালের স্বাধীনতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রকারীদের সংগে আঁতাত করতে ইন্ধন যুগিয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই। যে লোক স্বাধীনতার সংগ্রামে জড়িত ছিল, একটি নতুন জাতির সমৃদ্ধ আবাসভূমি নির্মানে যার ভূমিকা হতে পারত অগ্রপথিকের, তেমন একজন ব্যক্তি স্বপক্ষ ত্যাগ করে শত্র“পক্ষে যোগ দিলে, নানা সন্দেহের বেড়াজাল তাকে জড়িয়ে ধরে। তিনি কি স্বাধীনতা পক্ষে শত্র“শিবিরের গোয়েন্দা ছিলেন? তিনি কি নেহায়েত সুবিধাবাদী মানুষ? তিনি কি দুনৌকায় পা দিয়ে চলা এমন একজন রাজনৈতিক অভিযাত্রী যিনি আপনারে ছাড়া করেন না কাহারে কুর্নিশ?
    জনসেবার জগতে নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি একটি অপরিহার্য শর্ত। প্রথমে আওয়ামি লীগ, পরে বিএনপি এবং তারও পরে জাতীয় পার্টি এবং শেষে ডিগবাজী খেয়ে বিএনপিতে প্রত্যাবর্তন করায় মওদুদ সাহেবের কোন ভাবমূর্তিই টেকসই হয়নি। তবে ১৯৭৫ কে বিপ্লব মনে করে গজিয়ে উঠা দলগুলির সংগে মিলেমিশে ঘর করায় এবং শেষ পর্যন্ত হাওয়া-ভবনের মুরীদ হওয়ায় তাঁর একটা পরিচিতি হয়েছে বৈকি। এ ভাবমূর্তিই এখন তাঁর একমাত্র ভরসা। এ ভাবমূর্তি দেশপ্রেমিক, আওয়ামি, প্রগতিশীল, সমাজতান্ত্রিক, গনতান্ত্রিক, সমাজসেবী, দানশীল, ধর্মভীরু, জামাতি, বাকশালী, ক্যমিউনিস্ট, বাঙালী, সৎ. নির্ভরযোগ্য ইত্যাদি কোন একটি শব্দের মত সংজ্ঞায়িত নয়। যেমন আওয়ামি লীগ দিয়ে শুরু হওয়ায় বলা যায় তিনি এককালে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গনতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। তারপরেই তিনি বিএনপির নেতা হন। বিএনপি স¤¦ন্ধে যোগদেবার আগে বিএনপির প্রথম সেক্রেটারী জেনারেল শাহ আজিজ বলেছিলেন ইঘচ- ইধংরপধষষু ঘড় চড়ষরঃরপং. তারপরেও রাজাকার শাহ আজিজ জিয়ার সংগে হাত মিলিয়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে গোপনে বাংলাদেশ দখলকারী একাত্তরের শত্র“রা তাঁরই প্রাক্তন পার্টি পাকিস্তান মুসলিম লীগের আদলে বিএনপি তৈরি করেছিল।
    আওয়ামি লীগে থাকতে যে মওদুদ মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দানের জন্য ভারত ভক্ত ছিলেন, বিএনপিতে যোগদানের কারনে এখন তিনি একজন অন্ধ পাকিস্তানীর মতই ভারত ও হিন্দু বিদ্বেষী। গনতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধ,ু যুদ্ধোত্তর পরিবেশ ও পরিস্থিতির কেমন ভয়ঙ্কর চাপে বাকশাল ব্যবস্থার চিন্তা করেছিলেন, তা চাক্ষুষ দেখেশুনেও তিনি সামরিক গৃহযুদ্ধে জয়ী জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখলকে বহু দলীয় গনতন্ত্রের জয় হিসাবে স্বাগত জানিয়েছেন। বিলাতফেরৎ আইনজীবী অবশ্যই জানতেন বহুদল রাজনীতির আসল উদ্দেশ ছিল, একাত্তরে আবির্ভূত পাকিস্তানের সহযোদ্ধা জামাতে ইসলামি তথা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি পুনঃবহাল করা। এ হিসাবে জিয়ার মত মওদুদও মুক্তিযুদ্ধের একজন বিশ্বাসঘাতক। রক্তপাত রক্তপাত ঘটায়। এ নিয়মে জিয়া নিহত হবার পর এবার ক্ষমতায় এলেন জেনারেল এরশাদ। তার দলে যোগ দিতে কালবিল¤¦ করলেন না মওদুদ। এরশাদের রাজত্বকাল ছিল লুটেরা রাজনীতির স্বর্নযুগ। জিয়াযুগের সামরিকডান্ডা চালিত গনতান্ত্রিক রামরাজত্ব চালু রাখেন এরশাদ এবং তা নিষ্কন্টক রাখতে ধর্মের ব্যবহারকে আরও জৌলুষপূর্ন করলেন। তারপর এরশাদ জেলে গেলে মওদুদের ক্ষমতা ও সম্পদভোগে ছেদ পড়ার কথা ছিল। কিন্তু অশিক্ষিত ও পশ্চাদপদ সমাজে সুবিধাভোগী, ষড়যন্ত্রমূলক ও নীতিজ্ঞানশূন্য রাজনীতি চালু রাখতে যে যে গুণাবলী প্রয়োজন যেমন প্রগলভতা, মিথ্যাকে সত্য হিসাবে উপস্থাপনের ক্ষমতা, ক্ষমতার মালিকের প্রতি প্রশ্নহীন আনুগাত্য, আত্বসন্মানবোধহীনতা ইত্যাদি সবই আছে বলে, মওদুদ সাহেবের আবার ডাক পড়ল রাজনীতির অঙ্গনে। এবার আবারো বিএনপিতে। পাঞ্জাবী প্রবাদ অনুযায়ি ’যিত্থাদি খোতা, ওত্থেই খোলোতে’ যেখানকার গাধা সেখানে গিয়েই দাঁড়াবে। বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলে এখন তাঁকে বিএনপির মতই কথা বলতে হবে এবং তা হতে হবে তারেক জিয়া এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছানুযায়ী। এ হেন মওদুদের মুখে বাকশাল কিংবা রক্ষী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার ত তোতা পাখিরই বুলি। অনেক দিন আগে বিগত জামানায় জীবন শুরুর সততার সামান্যতমও আজ যদি অবশিষ্ট থাকত, মওদুদ যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের রুঢ় বাস্তবতা এবং নব্য শাসকদের অনভিজ্ঞতা বা অক্ষমতার আলোকে তখনকার দিনের গৃহীত অনেক ব্যবস্থার অযৌক্তিকতা বা ব্যর্থতা ক্ষমা করে দিতেন এবং গোপনে হলেও তাঁদের দেশপ্রেমের প্রশংসা করতেন। মওদুদকে ছাত্রাবস্থায় মধুর কেন্টিনে প্রথম দেখায় যে ধারনা হয়েছিল, এত বছর পরেও মনে হচ্ছে তিনি সেভাবেই আছেন- হালকা চিন্তার চটকদার মানুষ এবং লোকদেখানো তড়বড় স্বভাব। মানুষ, সমাজ, সংস্কৃতি, দেশ ও জাতির কোন বিষয়ে তাঁর কোন প্রত্যয়ী আদর্শ নেই। মন্দ, ভালোর প্রতি তাঁর কোন পক্ষপাতিত্ব নেই; উপযুক্ত পারিশ্রমিকে যে কোন পক্ষে ওকালতি করতে তাঁর আপত্তি নেই। এ জাতীয় লোকের একটি মাত্রই বিপদ : ন্যায়-অন্যায়ের সংঘাত রক্তাক্ত পরিণামে যেতে থাকলে তার উপর অস্ত্রাঘাত আসে উভয় দিক থেকে। একাত্তরের খুনি, ঘাতক-দালালদের নির্মূল করার অভিযানের মধ্য দিয়ে ৭৫তে হারানো মুক্তিযুদ্ধ-চেতনা ভিত্তিক স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের একটি সংগ্রাম বর্তমানে চালু হয়েছে। এটি কেবল আওয়ামি লীগের একার সংগ্রাম নয়। এটি জাতীয় সংগ্রাম। এখন বাংলাদেশের কোন ব্যক্তির নিরপেক্ষতার কোন সুযোগ নেই। এ সময় আওয়ামি লীগকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে চারদলীয় রাজনীতিকে ওপরে তোলার সস্তা চালাকি আসলেই বালখিল্য বোকামি।





    ।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।