NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

Back to Front Page

বেলাল বেগের অন্যান্য লেখা:

  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
  • একজন সোনার মানুষ দেখেছি
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক চিকিৎসা
  • রাজনীতিবাজ রাজনীতিবীদ ও জনগণ
  • চীৎকার সংস্কৃতি
  • ফালতু চীৎকার
  • পুরানো ক্ষতে খোঁচার যন্ত্রণা
  • নিমতলীর নরককুণ্ড বাংলাদেশের নিয়তী
  • কে বাঁচাবে বাংলাদেশ?
  • মুক্তচিন্তা


    কিসের এতো কথা


    বেলাল বেগ

    আবার বুঝি জাগছে বাঙালী


    বাঙালী চরিত্রের যে প্রধান বৈশিষ্ট বিনয়, তার অনেক গভীরে লুক্কায়িত ছিল হীনমন্যতার একটা আস্তরণ। এটি ছিল পাঠান, মুঘল ও বৃটিশের আক্রমণ ও দখলের সংগে বংশ পরম্পরায় মাথা নত করে থাকার অবিসম্ভাবী পরিণাম। বৃটিশ গনতন্ত্রের সংস্পর্শে আসার পর বাঙালীর আত্বাবিষ্কারের উদ্বোধন ঘটে। শিক্ষিত বাঙালী আবিষ্কার করল তার গৌরবের খনিসমূহ:- হাজার বছরের উচ্চমানবিক সাংস্কৃতিক ঐতীহ্য, একটি সমৃদ্ধ ভাষা এবং ধর্মনিরপেক্ষ জীবন। বাঙালীর জাতিস্বত্তার পুনরাবিষ্কারের পর কলকাতাভিত্তিক শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মধ্যে জাগরণের দুটি ধারা দেখা দিয়েছিল- একটি বৃটিশ গনতন্ত্রের অনুসরণে এগিয়ে যাওয়া এবং অন্যটি বিপ্লবের পথ। বিপ্লবের পথটি কয়েকটি হত্যাকান্ড এবং সূর্যসেনদের আকস্মিক চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় কারণ এতে ব্যাপক জনগোষ্ঠির কোন সম্পৃক্ততা যেমন ছিল না তেমনি ছিল শাসকদের নৃশংস দমননীতি। যাইহোক, আত্বাবিষ্কারের এ উভয় ধারার মিশ্রিত ফলে বাঙালী জাতীয়তাবাদ কেবল সারা ভারতের সবচাইতে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানই হয়েছিল না বরং অখন্ড ভারতীয় জাতীয়তাবাদেরও পথিকৃৎ হয়ে পড়েছিল। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ এতে প্রমাদ গোণে। সর্ব^ভারতীয় জাতীয়তাবাদ তাদের ভারত-ত্যাগ কেবল ত্বরান্বীতই করবে না বরঞ্চ তাদের অর্জিত সুবিধাসমূহ পরবর্তীকালেও হাতছাড়া হয়ে যাবে। প্রতিকার হিসাবে ১৮৫৭ সালের সিপাহী যুদ্ধ থেকে নেয়া ধর্মীয় বিভেদ ও শত্র“তা সৃষ্টির শিক্ষাকে আরও ফলপ্রসু করার উদ্যোগ নেয়। বঙ্গভঙ্গ ও তার বাতিল দিয়ে বৃটিশ তার ’ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতির সার্থকতা আর একবার প্রমান করল। শুধু তাই নয়, ভারতকে তিন টুকরো করে এ অঞ্চলকে সাম্রজ্যবাদের থাবার নীচে রাখতেও সক্ষম হলো। চল্লিশের দশকে স্ফূটাংকে পৌঁছা সামপ্রদায়িকতার রক্তাক্ততা ভারতে না হলেও পাকিস্তান নামক উদ্ভট রাষ্ট্রে জনগনের গনতান্ত্রিক সংগ্রাম কুৎসিৎ সামন্তবাদী ও সাপ্রদায়িক সামরিক বুটের তলায় পিষ্ট করতে থাকে। তা সত্বেও পূর্ববাংলায় গনতন্ত্রের সংগ্রাম অব্যাহত থাকে যদিও বাঙালী জতীয়তাবাদের ধারাটি যথেষ্ট ক্ষীন হয়ে আসছিল। এমন সময় ঘটে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার জন্য গনতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের উপর মুসলিম লীগ সরকারের গুলি বর্ষনের ঘটনা। বলা চলে ঐ একটি মাত্র ঘটনাই অলৌকিকভাবে বাঙালী জতীয়তাবাদকে রাতারাতি মহাশক্তিতে রূপান্তরিত করে দিয়েছে। তারপরের ইতিহাস পাকিস্তান-কেন্দ্রিক সামন্তবাদী ও উগ্র সামপ্রদায়িক সামরিক শক্তির সংগে বাঙালী জাতীয়তাবাদের নিরবচ্ছিন্ন গনতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রামকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে ১৯৭১ সনে পাকিস্তানীরা বাঙালীর একচ্ছত্র রাজনৈতিক দল ও তার সৃজন ও চিন্তাশীল মানুষদের নির্বিচার হত্যার সামরিক অভিযান চালায়। এ্যাদ্দিনে গনতন্ত্রের প্রভাবে বিশেষ করে ক্ষনজন্মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অতুলনীয় নেতৃত্বে বাঙালী জাতীয়তাবাদের শিখা প্রায় ঘরে ঘরেইই প্রজ্জ¦লিত হয়ে গিয়েছিল। একাত্তরে তাই গোটা বাংলাই বারুদের মত জ¦লে উঠেছিল। মানুষ কিন্তু ১৯৪৭ এর মত তখনও স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
    প্রস্তুতিহীন স্বাধীনতা তাই টিকল না। পাকিস্তানী শত্রুরা তাদের গোপন চর, সহযোগী বিশেষ করে স্বাধীনতার বাঙালী শত্র“ জামাতে ইসলামীর সাহায্যে বাংলাদেশ একপ্রকার দখল করে নেয় ১৯৭৫ সনে বাংলার একচ্ছত্র নেতা শেখ মুজিবকে হত্যা করে। স্বাধীনতার মুখোস পরানো পাকিস্তান-পন্থি নতুন শাসকেরা নানা ছলে বলে সময় কাটিয়ে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দোসর জামাতে ইসলামিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দেয়। অবশেষে বাংলাদেশে তথ্যবিপ্লবের আগ্রগতির কারণে জনগনের সামনে বঙ্গবন্ধুর হত্যা, জিয়ার উত্থান, বিএনপির জন্ম, এরশাদের ক্ষমতা দখল, জেনারেল মঞ্জুর হত্যা, জামাতে ইসলাম, ছাত্রশিবির এবং বাংলা ভাইদের উত্থান, দেশ জুড়ে বোমাবাজী ইত্যাদি রহস্যগুলি উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। এখন শুরু হয়েছে জেগে উঠা একাত্তরের শত্র“দের সমূলে উৎপাটনের পালা। প্রথমে সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার। বাঙালী এই প্রথম এক সংগে এতগুলি ফাঁসির ঘটনা দেখল। বাঙালী তার মনে শত শত বছরের দাস্যতালদ্ধ ভীরুতার গোপন কুঠরি যে ভেঙে ফেলেছে, এ ঘটনা তার জাজ্জল্যমান প্রমান। এ যেন বাঙালীর আরেকবার জেগে উঠা। জাগ্রত বাঙালীকে ঠেকায় কে? এবার আর একাত্তরের ঘাতক দালালদের নিস্কৃতি নেই। এখন বাঙালীর দ্বিতীয় মীরজাফর, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চর, জিয়াউর রহমানের বিএনপিরও পোস্টমর্টেম করবে বাংলার জাগ্রত জনতা। তারই প্রাথমিক পর্যায়ে সেদিন ধরা পড়েছে একাত্তরের তিন শত্র“- জামাতের তিন শীর্ষ নেতা। বাঙালীর বিনয়ী ও সহযোগিতামূলক চরিত্রের নীচে যে ভীরুতার আস্তরণ ছিল তা খসে পড়েছে বলেই বাঙালী এখন স্বাধীনতার মর্ম বুঝতে শুরু করেছে। এখন তারা দেশে বিদেশে চরে বেড়াচ্ছে, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, বিশ্বশান্তিতে রাখছে আবদান। এই সেদিন এক বাঙালী যুবক হিমালয়ের উচ্চতম শিখরে উঠে বিশ্ববাসীকে জানান দিয়েছে ’ বল বীর চির উন্নত মম শির’।





    ।।এই লেখাটি সম্পর্কে আপনার মতামত দিন।।