NYnews52.com a e-news paper in Bengali and English with video excerpts.
Logo: NYnews52.com

অর্থনীতির খবর



অর্থনীতি


চীন হতে পারে বাংলাদেশের নতুন রফতানি গন্তব্য



অর্কপ্রভ দেব: চীনের অর্থনীতি নিয়ে গোটা বিশ্বে গবেষণার অন্ত নেই। গবেষণা-পর্যালোচনা হবে না-ই বা কেন? ১৯৭৮ সাল থেকে চীনের অর্থনীতিতে সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হয়। তারপর থেকে চীনকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পদ্ধতির পরিবর্তে বাজার-মুখী অর্থনীতির কৌশল বাস্তবায়নের ফলে বিগত তিন দশকে মোট দেশীয় উৎপাদন (জিডিপি) দশগুণ বেড়েছে। গত ৩০ বছরে গড় বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি।

ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি)’র ভিত্তিতে ২০০৯ সালে চীনের মোট জিডিপি দাঁড়ায় ৮.৭৭ ট্রিলিয়ন (৮,৭৭,০০০ কোটি) মার্কিন ডলার। যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়। সর্বাধিক জিডিপি যুক্তরাষ্ট্রের। ১৪.৩ ট্রিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র আর কতদিন প্রথম স্থান ধরে রাখতে পারবে এখন তা-ই প্রশ্ন। কারণ ইতোমধ্যে চীন জাপান ও জার্মানিকে ছাপিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ রফতানিকারক দেশ। ২০০৯ সালে চীন ১.২০২ ট্রিলিয়ন ডলার রফতানি করেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে জার্মানি। ১.১২১ ট্রিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র ১.০৫৭ ট্রিলিয়ন ডলার রফতানি করে তৃতীয় স্থানে আছে। ২০০৯ সালে চীন ১.০০৬ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানির মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ আমদানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করেছে ১.৬০৪ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য। চীনের সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও গগনচুম্বী। আইএমএফ-এর রিপোর্ট অনুযায়ী পিপিপি’র ভিত্তিতে চীনের মাথাপিছু আয় ৬,৫৬৭ ডলার। গত ত্রিশ বছরে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার ৫৩ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যদিও এখনো ১০.৮ শতাংশ জনগণ দৈনিক এক ডলারের কম আয় দিয়ে জীবন যাপন করছে। শিশুমৃত্যুর হার ৪০ শতাংশ এবং মাতৃমৃত্যুর হার ৪১ শতাংশ কমেছে। প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ টেলিফোন সুবিধা ভোগ করছে।

চীনের অর্থনীতির এ শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির মূলে আছে তাদের অর্থনৈতিক সংস্কার। চীনের এ সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়ন কৌশলও অন্যান্য দেশ থেকে আলাদা। তারা ধাপে ধাপে সংস্কার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। ৩০ বছর পরও চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সংস্কার কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং মুদ্রা ‘উয়ান’-এর অব্যাহতভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে ডলারের বিপরীতে উয়ানের মূল্যমান প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় বিশ্ব ও দক্ষিণ ব্লকের একটি দেশ, সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী ও বন্ধুভাবাপন্ন এবং এশিয়ার একটি দেশ পশ্চিমা বিশ্বের সাথে টেক্কা দিয়ে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে এটি আমাদের জন্য আনন্দের ও গৌরবের। এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য হওয়া উচিত চীনের এ উন্নয়নের অংশীদার হওয়া। ইতোমধ্যে চীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, খনি, যোগাযোগ, যানবাহন, যন্ত্রপাতি, প্রস্তুতকৃত পণ্য, তথ্য-প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে চীনের আধিক্য ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু চীনে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অবস্থান নেই (সারণী)।

অর্থবছর রফতানি (কোটি ডলার) মোট রফতানির %
২০০৮-০৯ ৯.৭ ০.৬২
২০০৭-০৮ ১০.৭ ০.৭৬
২০০৬-০৭ ৯.৩ ০.৭৬
২০০৫-০৬ ৬.৪ ০.৬১
২০০৪-০৫ ৫.৮ ০.৬৭

সারণী অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে গড়ে বার্ষিক ৮.৩৮ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি হয়েছে। এ আয়ের ৪০ শতাংশেরও বেশি এসেছে কাঁচা পাট রফতানির মাধ্যমে। অন্যান্য রফতানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, রাসায়নিক পণ্য, কৃষিপণ্য ও পাটজাত দ্রব্য। গত ২/৩ বছর ধরে তৈরি পোষাক রফতানি কিছুটা বেড়েছে। তাও চীনে মোট রফতানির মাত্র ৯ শতাংশ। চীনের বার্ষিক আমদানি যেখানে ১,০০,০০০ কোটি ডলারের বেশি সেখানে নিকট প্রতিবেশী হয়েও বাংলাদেশ কেন তার একটা অংশ সরবরাহ করতে পারছে না, তা একটু খতিয়ে দেখলেই পরিষ্কার হবে।

চীনের আমদানির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে শিল্পের যোগান ও মূলধনী পণ্য- যেমন, মেশিনারি ও উচ্চ-প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিই মূলত এসব পণ্যের যোগানদাতা। এছাড়াও চীনের বড় অঙ্কের আমদানি তালিকায় আছে জ্বালানি, চিকিৎসা সামগ্রী, ধাতব আকরিক, প্লাস্টিকস এবং জৈব রাসায়নিক পদার্থ। এগুলোর কোনোটারই রফতানি-সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই এবং নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাবনা সৃষ্টিও হবে না। এর বাইরেও চীন তার বিশাল ম্যানুফেকচারিং খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানি করে। যেমন, বাংলাদেশ সামান্য পরিমাণে কাঁচাপাট, চামড়া ও বিভিন্ন বেসিক ক্যামিক্যালস রফতানি করে। সাম্প্রতিককালে চীনের প্রস্তুতকৃত পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়ছে। সাবান, শ্যাম্পু থেকে শুরু করে তৈরি পোষাক সবই আমদানি করছে। এ আমদানিতে ভাগ বসানোর জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০-জাতির বাণিজ্য-জোট ‘আসিয়ান’, প্রতিবেশী ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এমনকি যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত উঠেপড়ে লেগেছে। সাম্প্রতিক বিশ্ব কূটনৈতিক গতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে চীনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার জন্য সবাই কেমন মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর মূল কারণ, চীনের এ বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদার একটা অংশের যোগান-দাতা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করা। চীনের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের একটা লক্ষ্য হচ্ছে, রফতানি আয়ের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করা। তিন যুগের এ প্রচেষ্টার ফল এখন আসতে শুরু করেছে। জাতীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ার সাথে সাথে জনগণের আয়ও বাড়ছে। বাড়ছে তাদের চাহিদা। বিশ্বায়নের এ যুগেও ব্যক্তি-ভোগ বাড়ানোর উপকরণের অভাব নেই। ইন্টারনেটের কল্যাণে এসব নতুন নতুন ম্যানুফেকচারিং পণ্যের প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা, প্রাপ্তিস্থান নিমেষেই জানা যায়। চীনের এ ক্রমবর্ধমান ম্যানুফেকচারিং পণ্যের বাজারে বাংলাদেশ ভাগ বসাতে পারে এবং বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনাও আছে। শুধু পরিবহন ব্যয় ও শ্রমমজুরি কম বলে নয়, তৈরি পোষাক, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, রাসায়নিক সামগ্রীসহ বেশকিছু প্রস্তুতকৃত পণ্যে বাংলাদেশ এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশেরই প্রতিযোগী। বর্তমানে চীনের আমদানির প্রায় ২০ শতাংশ এ ম্যানুফেকচারিং পণ্য এবং ক্রমেই তা বাড়ছে। ফলে বাংলাদেশ চীনের বাজারকে লক্ষ্য করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজালে রফতানির নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হবে। চীনের অভ্যন্তরীণ বাজার চাহিদায় প্রবৃদ্ধি আরো বহু বছর অব্যাহত থাকবে। কারণ, চীনের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার শেষ কোথায় কেউ জানে না।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর চীনে রফতানি বাড়ানোর আরেকটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং চীনের অর্থনীতি যতো সমৃদ্ধ হচ্ছে সুযোগটি ততোই প্রসারিত হচ্ছে। প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে তেমনি চীনের উন্নয়নেরও কিছু খারাপ দিক আছে। প্রথমটি হচ্ছে, ধনী-গরিব বৈষম্য। বর্তমানে সর্বোচ্চ আয়ভোগী ১০ শতাংশ জনগণ মোট জাতীয় আয়ের ১৮ শতাংশ অর্জন করছে। এরা মূলত উপকূলীয় প্রদেশগুলোর বাসিন্দা। অপরদিকে সর্বনিম্ন আয়ভোগী ১০ শতাংশ মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ৩.২ শতাংশ অর্জন করছে। এদের অধিকাংশের অবস্থান মধ্য এবং দুর্গম অঞ্চলের প্রদেশগুলোতে। এ বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। এ নিম্ন আয়ভোগী জনগণের চাহিদা সস্তা পণ্য। যা চীনের নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা দিয়ে মেটানো ধীরে ধীরে অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর পণ্য চীনের এ গরিব জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে পারে। চীনের আরেকটি সমস্যা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। তা হচ্ছে, শ্রমিকের উচ্চ মজুরি। চীনে এখন একজন অদক্ষ শ্রমিকের মাসিক মজুরি ২০০ ডলার। বাংলাদেশে মাসিক ন্যূনতম মজুরি ৩০ ডলারেরও কম। এছাড়াও চীন সরকার বহু বছর ধরে ‘এক পরিবার এক সন্তান’ নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার ফলে ৩৫ বছরের কম বয়সী শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ দুই কারণে চীনে প্রস্তুতকৃত পণ্যের উৎপাদন মূল্য ক্রমেই বাড়ছে। যা বিশাল গরিব জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ পণ্যের বাজার সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের তৎপরতা চালাতে হবে। নতুন বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগালে চীনে রফতানি বাড়ানোর অপার সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব হবে।
(দৈনিক ইত্তেফাক থেকে)

যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন বেকারত্বের সংখ্যা ৯.৯ শতাংশ। ওবামা ক্ষমতা নেওয়ার সময় এই সংখ্যা ছিলো ৭.৬ শতাংশ। যদিও বুশের রেখে যাওয়া পঙ্গু অর্থনীতির মেরুদণ্ড সোজা করার কাজে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ওবামা প্রশাসন--ইতিমধ্যে রেসেশন কাটিয়ে দেশটি অনেকটাই স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং ২০১০ সালের এপ্রিলেই তিনলক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে--তথাপিও বেকারত্বের হার যেনো বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ অবশ্য রিয়েলস্টেটে যুগান্তকারী ধ্বস। একে একে ব্যাঙ্কগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনেও রয়েছে এই একই সমস্যা। ওদিকে ৬ মে, ২০১০ একদিনে মাত্র দু'ঘণ্টার ভেতর ডাওজোন্স হারিয়েছে ১ হাজার পয়েন্ট, যদিও দিনের শেষ প্রহরে ওই হারানো সূচকের ৩২৩ ফিরে আসে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কনজুমার কনফিডেন্স ফিরে আসতে আরো প্রায় ছ'মাসের মতো লেগে যাবে।








Contact Us