অর্থনীতির খবর |
অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন বেকারত্বের সংখ্যা ৯.৯ শতাংশ। ওবামা ক্ষমতা নেওয়ার সময় এই সংখ্যা ছিলো ৭.৬ শতাংশ। যদিও বুশের রেখে যাওয়া পঙ্গু অর্থনীতির মেরুদণ্ড সোজা করার কাজে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ওবামা প্রশাসন--ইতিমধ্যে রেসেশন কাটিয়ে দেশটি অনেকটাই স্বভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং ২০১০ সালের এপ্রিলেই তিনলক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে--তথাপিও বেকারত্বের হার যেনো বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ অবশ্য রিয়েলস্টেটে যুগান্তকারী ধ্বস। একে একে ব্যাঙ্কগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পিছনেও রয়েছে এই একই সমস্যা। ওদিকে ৬ মে, ২০১০ একদিনে মাত্র দু'ঘণ্টার ভেতর ডাওজোন্স হারিয়েছে ১ হাজার পয়েন্ট, যদিও দিনের শেষ প্রহরে ওই হারানো সূচকের ৩২৩ ফিরে আসে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন কনজুমার কনফিডেন্স ফিরে আসতে আরো প্রায় ছ'মাসের মতো লেগে যাবে। একটি অর্থনৈতিক সুসংবাদ সিরাজুল ইসলাম কাদির॥ চারদিকে শুধুই দুঃসংবাদ। অর্থনীতি রাজনীতি সমাজনীতি সর্বত্রই দুঃসংবাদ। শুধু দুঃসংবাদ। এরই মাঝে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুড়িতে একটি সফল মূল্যায়ন যুক্ত হলো। আর এই মূল্যায়ন করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড এ্যান্ড পুওর’স (এস এ্যান্ড পি)। বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের মূল্যায়ন এই প্রথম। মূল্যায়নের নির্যাস মন্তব্য : ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল’। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল গোটা বিশ্ব এক মহাদুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছিল। বিশ্বের সব শক্তিধর রাষ্ট্র এই দুর্যোগের শিকার। বিশ্ব অর্থনীতি এখন একই গ্রন্থে গ্রথিত। তাই এই শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্ত বাংলাদেশের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলোও দুর্যোগের ঘনঘটার শিকার হয়। কিন্তু সৌভাগ্যবশত দক্ষিণ এশিয়ার এই দারিদ্র্যপীড়িত দেশ সেই ঘনঘটা থেকে এক রকম রক্ষা পায়। আর সে কথাই এস এ্যান্ড পি তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এ জন্য বাংলাদেশের বিচক্ষণ অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের অনুসৃত মুদ্রানীতি ও ঋণ নীতির মূল্যায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। অন্যান্য দেশ যেমন নেপাল, ভুটান বা মালদ্বীপের কোনো অবস্থানই নেই এই মূল্যায়ন তালিকায়। প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান এখন আসিয়ানভুক্ত দেশ ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের প্রায় কাছাকাছি। এর ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণপ্রদানকারী সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক কিংবা জেদ্দাভিত্তিক ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে আরো সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া সম্ভব হবে। একইভাবে দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে ধনী দেশগুলোর কাছ থেকেও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যাবে। শুধু ঋণ নয়, বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ও কমবে। পণ্য আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে ঋণ পত্র বা লেটার অব ক্রেডিট (এল.সি) খুলতে হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ও গ্রাহক ভেদে মার্জিনের পরিমাণে তারতম্য ঘটে। মার্জিন বেশি হলে আমদানিকারকের পকেট থেকে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। আবার ব্যাংকও গ্রাহকভেদে তাদের দেয়া ঋণের জন্য সুদের হারেরও তারতম্য ঘটায়। একটি দেশের জন্য যখন কোনো সুপ্রতিষ্ঠিত মূল্যায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইতিবাচক মন্তব্য করে তখন তার সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আশা করা যায়, এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। বেশ কয়েক বছর আগের একটি ঘটনা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ১৯৯৬ সালের দিকের কথা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তখন দেশ পরিচালিত হচ্ছে। ঐ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় ‘ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক শক্তি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।’ এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ওপর ভর করে তখন আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঐ প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল : ব্যাংকস্ আর অন দ্য ভার্জ অব কলাপসড্। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের ব্যাংকের করুণ অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়। এর পরিণতি বাংলাদেশের জন্য ছিল অসুখকর। তখন বাংলাদেশি ব্যাংকে কোনো এলসি খোলা হলে তা বহির্বিশ্বের ব্যাংকগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ জন্য তারা বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোতে খোলা এলসির বিপরীতে পাল্টা অনুমোদন চায় বিদেশী ব্যাংকÑ যেমন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, আমেরিকান এক্সপ্রেস কিংবা এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছ থেকে। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এটি ছিল এক চরম লজ্জার। এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে এস এ্যান্ড পির এই মূল্যায়ন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ একটানা প্রায় ৬ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে। রপ্তানির প্রবৃদ্ধির হার গড়ে দুই অঙ্কের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় রিজার্ভ ৯০০ কোটি থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে। বৈদেশিক দায় পরিশোধের চিত্র স্বাস্থ্যকর। চলতি হিসাবে বাংলাদেশ উদ্বৃত্তের ঘরে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তাই এস এ্যান্ড পি’র এই মূল্যায়ন খুবই সঙ্গত যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ও সঠিক পথে চলছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী একটি সত্য উচ্চারণ করে বলেছেন, এই সাফল্যের জন্য এককভাবে বর্তমান সরকার কৃতিত্বের দাবিদার নয়। এ জন্য বিগত সররকারগুলোরও অবদান রয়েছে। বস্তুতপক্ষে সরকার নীতি ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু রাজনৈতিক হীনমন্যতার জন্য এই সত্যকে আড়াল করা হয়। বর্তমান অর্থমন্ত্রী সে কাজটা না করে সকলের কাছে সম্মানিত হয়েছেন। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কটের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছেÑ এসব বাধা বিপত্তি দ্রুত দূর করা সম্ভব হলে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে আরো ভালো করতে পারবে। যেমন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পথে অবকাঠামো সঙ্কট বিশেষ করে জ্বালানির সঙ্কটের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক ঋণ এবং সরকারের অতিমাত্রায় ঋণ গ্রহণের চিত্রটিও মূল্যায়নে উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম সম্পদ আহরণ/ রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে দুর্বলতাও চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, গত এক দশকে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপি’র বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তৈরি পোশাক শিল্প এবং মানব সম্পদ খাতের রপ্তানি আয় দেশের অর্থনৈতিক শক্তিকে আরো বলিষ্ঠ করেছে। ২০০১ সালে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র (মোট জাতীয় উৎপাদন) তুলনায় সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ। আর এই হার ২০১০ সালে ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। চলতি হিসেবে বৈদেশিক ঋণের বোঝাও বেশ ভারিÑ শতকরা ৭০ ভাগ। বাংলাদেশের কর আহরণের হার জিডিপির শতকরা ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। আর এই হার বিশ্বের যেসব দেশ খুবই নিচের সারিতেÑ তারই অন্তর্ভুক্ত। এসব অন্তরায় কাটিয়ে ওঠার জন্য মূল্যায়ন প্রতিবেদনে মানব সম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুরবস্থা জরুরি ভিত্তিতে নিরসনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় অর্থনৈতিক অর্জনের বর্তমান ধারা বহাল রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ('সাপ্তাহিক' থেকে ) তামাক চাষীদের ব্যাংক ঋণ খায়রুল হোসেন রাজু ॥ তামাক চাষীদের ব্যাংক ঋণ না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আগামী রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হবে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন কোন খাতে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে না পারে এবং তামাক চাষীরা যাতে উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এজন্যই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যদিও ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না হয় এমন কোন খাতে বিনিয়োগ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা অমান্য করে পরিবেশ বিধ্বংসী একাধিক খাতে বিনিয়োগ করছে। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পৰ থেকে এসব বিষয় খতিয়ে দেখেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি একটি নতুন গাইডলাইন তৈরি করেছে। এ গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তামাক চাষীদের উৎপাদন, রফতানি এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার আর্থিক সহায়তা করতে পারবে না। কোন ব্যাংক যদি এ নির্দেশনা অমান্য করে তামাক চাষীদের ঋণ প্রদান করে বা পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন খাতে বিনিয়োগ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এসএম মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, চাষীদের তামাক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করার লক্ষেই ঋণ না দেয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো চাষীদের ঋণ প্রদান করায় তামাকের উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের চাহিদা মেটানোর পরও তামাক রফতানি করা হচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে কোন ব্যাংক যাতে তামাক উৎপাদনে ঋণ প্রদান না করে এ লক্ষেই একটি নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। আগামী রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হবে। তিনি আরও বলেন, এ নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলো তামাক চাষীদের ঋণ প্রদান করতে পারবে না। এতে অনেক চাষী নিজ উদ্যোগে তামাক চাষ করা থেকে বিরত থাকবেন। একই সঙ্গে দেশে তামাক চাষের পরিমাণ কমে এলে তামাকের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের তামাকজাত পণ্য আমদানি করতে হবে। এতে তামাকজাত পণ্যের মূল্যও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। ফলে জনসাধারণ তামাকজাত পণ্য পান করা থেকে কিছুটা হলেও বিরত থাকবেন। সেই সঙ্গে যেসব জায়গায় তামাক চাষ করা হতো সেখানে অন্য ফসল উৎপাদন করা হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাসহ জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পাবে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি এ নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য যাতে নষ্ট না হয় এ ৰেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে ইটভাঁটি শিল্পের জন্য উন্নতমানের চুল্লি ব্যবহারের লক্ষে একটি রিফাইন্যান্স ফান্ড গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা নিয়ে এ ফান্ড গঠন করেছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে ফাইন্যান্স করার জন্য উদ্যোক্তা খুঁজে বের করে ঋণ প্রদানের জন্যও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ) |
Contact Us